ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন তাঁরই ছেলে। প্রিয় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে কফিন বহনের সময় আবেগে ভেঙে পড়েন সহকর্মীরা। কে ছিলেন তিনি? কেন এই মৃত্যুতে কেঁদেছে গোটা আই..

বিদায়ের মুহূর্তে বাবার পাশে ছেলে: সুপ্রিম কোর্টে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা সম্পন্ন

বাংলাদেশের আইন পেশার এক উজ্জ্বল অধ্যায় শেষ হলো। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের জানাজা আজ সোমবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে।
এই ব্যতিক্রমী জানাজা আরও স্মরণীয় করে তুলেছেন তার বড় ছেলে ব্যারিস্টার এহসান আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, যিনি নিজ হাতে বাবার জানাজার ইমামতি করেছেন।

জানাজার আগে প্রয়াত ব্যারিস্টার রাজ্জাকের ছোট ছেলে ইমরান আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। কফিন ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা সহকর্মীদের অনেকেই চোখের জল লুকোতে পারেননি। কেউ কাঁদলেন চুপিসারে, কেউ বা পাশে দাঁড়ানো সহকর্মীর কাঁধে মাথা রাখলেন।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ অসংখ্য বিশিষ্টজন।

প্রয়াত ব্যারিস্টার রাজ্জাকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা। জানাজা শেষে মরদেহ দ্বিতীয় জানাজার উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্ট ত্যাগ করে, যেখানে তার বিদায়ের মুহূর্তে আইনাঙ্গনের অনেকেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।


শেষ নিঃশ্বাসে ফিরলেন জন্মভূমিতে

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক গত ৪ মে বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে অবস্থানের পর ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আবারও আইন পেশায় সক্রিয় হন।


রাজনৈতিক জীবনের বিতর্ক ও সাহসী সিদ্ধান্ত

২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের পক্ষে আইন লড়াইয়ের পর দেশ ছাড়েন রাজ্জাক। দীর্ঘ ১১ বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তিনি ২০১৯ সালে জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেন এবং পরবর্তীতে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট সেই পদ থেকেও সরে দাঁড়ান।


ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন: এক সংগ্রামী অধ্যায়ের প্রতিচ্ছবি

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ১৯৪৪ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শেখলাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিএ (অনার্স) ও এম এ ডিগ্রির পর ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে বেশ কয়েক বছর আইন পেশায় যুক্ত থাকার পর ১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে হাইকোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন।

১৯৯০ সালে “দ্য ল’ কাউন্সেল” নামে নিজস্ব ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন, যা সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশার ক্ষেত্রে এক জনপ্রিয় নাম হয়ে ওঠে। ২০০২ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে স্বীকৃতি পান।

ব্যারিস্টার রাজ্জাকের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তার দুই ছেলেই ব্যারিস্টার এবং সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করেন, যা তার জীবনের আরেকটি গর্বের অধ্যায়।


শেষ কথা

একটি জীবন যখন কেবল নিজের জন্য নয়, বরং পুরো সমাজ, আইনাঙ্গন ও দেশের জন্য উদাহরণ হয়ে ওঠে, তখন তার চলে যাওয়া শুধু একটি পরিবারের শোক নয়—পুরো জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

বিদায়ী মুহূর্তে বাবার জানাজা পড়ানো ছেলের কণ্ঠে শুধু কোরআনের আয়াত নয়, ছিল বুকচেরা হাহাকার। আইনাঙ্গনের যে গাছটি এতদিন ছায়া দিয়ে রেখেছিল, আজ সেই গাছ উপড়ে গেল।
কিন্তু রেখে গেলো এক প্রেরণাদায়ী ইতিহাস।

לא נמצאו הערות