close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ব্যাংক খাতে ভয়াবহ তারল্য সংকট: বাজেট ঘাটতি সামাল দিতে মরিয়া সরকার..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
অর্থ পাচার, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও রাজস্ব আদায়ে ধস—সব মিলিয়ে ব্যাংক খাতে দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন তারল্য সংকট। সরকারের হাতে নেই বিকল্প পথ, ঘাটতি মেটাতে বিদেশি ঋণের দিকেই ঝুঁকছে অন্তর্বর্তী সরকার। কেটে কমানো..

ব্যাংক খাতে ভয়াবহ তারল্য সংকট, বাজেট ঘাটতি সামাল দিতে মরিয়া সরকার

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে এক ভয়াবহ তারল্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বড় অঙ্কের অর্থ পাচার এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা এই সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং ঋণ সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারও কঠিন চাপে রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বাজেটের ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক ঋণের দিকে ঝুঁকছে। সম্প্রতি অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।

প্রাথমিক বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা এখন ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। অপরদিকে, বৈদেশিক ঋণ ৯৫ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।

বাজেট কমানো, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস

উক্ত বৈঠকে আর্থিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেটের আকারও ৫৩ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে, যার ফলে সংশোধিত বাজেট দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায়।

অপচয় রোধে সরকারের পদক্ষেপ

সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল করে অনেক অর্থ সাশ্রয় করেছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত অংশের সংস্কারে আগের সরকার যেখানে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল, সেখানে নতুন সরকার তা মাত্র ১০ কোটি টাকায় সম্পন্ন করেছে। তার মতে, এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে বাজেট খরচে উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় ঘটবে।

আন্তর্জাতিক ঋণে ভরসা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার কারণে বিদেশি ঋণদাতারা আগের তুলনায় বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকার বৈদেশিক ঋণ বাড়াতে আগ্রহী হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ঋণের ওপর চাপ কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ব্যাংক ঋণ পরিস্থিতি: বাস্তবচিত্র ভয়াবহ

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে ৯৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ৪১ হাজার কোটি টাকা দিয়ে পূর্বের বকেয়া ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে সবচেয়ে বেশি ঋণ গ্রহণ করা হয়—যার পরিমাণ প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এই পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ বাড়েনি, অথচ সরকার বিপুল ঋণ নিচ্ছে। এতে বেসরকারি খাত মারাত্মক সংকটে পড়ছে। পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পের জন্য ডলার কেনা বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার বাজারেও চরম চাপ তৈরি হচ্ছে।

রাজস্ব আদায়ে ধস

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার কিছুদিন পরেই রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়, যার ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে পড়ে বাজেট বাস্তবায়নের দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবায়নের প্রাথমিক ধাপে শুরু হয় অর্থনৈতিক অচলাবস্থা। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে, শিল্প খাতে উৎপাদন কমে যায়, বন্দরগুলোর গতি মন্থর হয়ে পড়ে। ফলে সবচেয়ে বড় আঘাত আসে রাজস্ব আহরণে।

আর্থিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায় হয়েছে মাত্র ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা, যা গত দুই অর্থবছরের তুলনায় কম। একই সময়ে কাস্টমস ডিউটি আদায় হয়েছে ২৯ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা এবং আয়কর আদায় হয়েছে ৭৩ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় অনেক কম।

আইএমএফ-এর চাপে সরকার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইএমএফ-এর দেওয়া শর্ত অনুযায়ী অতিরিক্ত রাজস্ব সংগ্রহ করাটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চাপ সামাল দিতে সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির চাপে প্রবৃদ্ধি পিছিয়ে

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, সরকার বর্তমানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, ফলে প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিকে তেমন মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তাই প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে ৫ শতাংশে আনা হয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে না, কারণ ইতোমধ্যে বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

کوئی تبصرہ نہیں ملا


News Card Generator