close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বিশ্বদূতের ভূমিকায় ইউনূস: সুপার ডিপ্লোমেসির নতুন অধ্যায়..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কূটনীতিতে দেখাচ্ছে ভিন্নমাত্রার চমক। পাকিস্তান থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত—সব ক্ষেত্রে তার সুপার ডিপ্লোমেসি এনে দিচ্ছে বাস্তব পরিবর্তন।..

৫ আগস্টের পর শুরু হওয়া রাজনৈতিক পালাবদলের ঢেউ এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে রূপ নিচ্ছে। সেই ঢেউয়ের কেন্দ্রে আছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশে-বিদেশে চলমান আলোচনায় পাকিস্তান ঘেঁষা তকমা জুড়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে, বিশেষ করে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হওয়ায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বেশ তীব্র। তবে সেই আলোচনার কেন্দ্রে ড. ইউনূসের ‘সুপার ডিপ্লোমেসি’ আজ নতুন বাস্তবতার জন্ম দিচ্ছে।

গত সপ্তাহে দীর্ঘ ১৫ বছর পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান সচিব পর্যায়ের বৈঠক। এটি শুধু দুই দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় নয়, বরং এটি ইউনূস সরকারের কূটনীতির স্বতন্ত্র রূপের একটি বহিঃপ্রকাশ। এই বৈঠকে বাংলাদেশ একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমা, পাওনা টাকা ফেরত এবং আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবর্তনের দাবি স্পষ্টভাবে তোলে। এটি নিছক সৌজন্যমূলক বৈঠক ছিল না, বরং আত্মমর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় দাবির বিষয়গুলো জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়।

এই কূটনীতিকে বলা হচ্ছে ‘সুপার ডিপ্লোমেসি’। এটির বৈশিষ্ট্য হলো—প্রচলিত সীমার বাইরে গিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সরাসরি উদ্যোগ গ্রহণ। ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কেবল কূটনৈতিক চ্যানেলেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং তার ব্যক্তিগত পরিচিতি, আন্তর্জাতিক মর্যাদা এবং গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বপরিসরে দেশকে উপস্থাপন করা হচ্ছে এক নতুন কণ্ঠে।

যেখানে অতীতে হতাশা, এখন আলোচনার দরজা খুলছে

দীর্ঘ সময় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বক্তব্য, প্রতিবাদ ও অবরোধের রাজনীতি চলেছে। কিন্তু বাস্তব ফলাফল ছিল শূন্য। ৪.৩ বিলিয়ন ডলারের পাওনা আদায়, গণহত্যার ক্ষমা কিংবা আটকে থাকা পাকিস্তানিদের প্রত্যাবর্তনে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ড. ইউনূস সেই পুরোনো পথে না হেঁটে বাস্তব কূটনীতিকে বেছে নিয়েছেন। এবার আলোচনা শুরু হয়েছে, দাবি উত্থাপিত হয়েছে। এটি যদি পূর্ণ সমাধানের সূচনা হয়, তবে তাকে বলা যেতে পারে একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ড. ইউনূসের ত্বরিত পদক্ষেপ

যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, তখন ইউনূস সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল অপ্রচলিত এবং দ্রুত। ওয়াশিংটনের দূতাবাস বা অপেক্ষার কৌশলকে পাশ কাটিয়ে, তিনি সরাসরি প্রেসিডেন্টকে চিঠি পাঠান। ফলস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ সাময়িকভাবে স্থগিত করে। এই দ্রুত পদক্ষেপই ‘সুপার ডিপ্লোমেসি’র প্রকৃত রূপ।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক: বন্ধুত্বে মর্যাদার ভারসাম্য

ইতিপূর্বে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মানেই একতরফা বন্ধুত্ব। কিন্তু ড. ইউনূস সেই ধারাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেও তিনি বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধে ভারতের সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি কৌশলগত বার্তা দিয়েছেন—যে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত নিজেই।

চীনের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

চীনের সঙ্গেও ইউনূসের কূটনীতি চমকপ্রদ। তিনি কেবল বিনিয়োগ আহ্বানেই থেমে থাকেননি, বরং হাতে-কলমে খাতভিত্তিক কৌশল উপস্থাপন করে বাংলাদেশকে উন্নয়নের সহযাত্রায় যুক্ত করেছেন। এটি অতীতে দেখা যায়নি।

সংযুক্ত আরব আমিরাত: সুপার ডিপ্লোমেসির অভাবনীয় দৃষ্টান্ত

৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে সমর্থন জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু ড. ইউনূসের হস্তক্ষেপে সেই দণ্ডপ্রাপ্ত প্রবাসীদের মুক্তি দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এটি শুধু বিরল নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের জন্য এক অসাধারণ অর্জন।

বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের নতুন পরিচয়

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইউনূস কেবল সরকারপ্রধান নন, তিনি এখন এক ‘গ্লোবাল স্টেটসম্যান’। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন থেকে শুরু করে টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের সেরা ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় স্থান পাওয়া—সবই প্রমাণ করে যে ইউনূসের সুপার ডিপ্লোমেসি একটি কার্যকর বাস্তবতা।

উপসংহার: নেতৃত্ব বদলালে কূটনীতির মানচিত্রও বদলায়

প্রফেসর ইউনূস দেখিয়েছেন, কূটনীতি কেবল রুটিন মাফিক চিঠিপত্র চালাচালি নয়। এটি হতে পারে একটি রাষ্ট্রের আত্মমর্যাদার প্রতিচ্ছবি। তিনি যেমন ভারতের সঙ্গে শক্তির ভারসাম্য রক্ষা করছেন, তেমনি চীনের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক, পাকিস্তানের সঙ্গে বাস্তববাদী আলোচনার দ্বার খুলছেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দেশের স্বার্থ রক্ষা করছেন।

ড. ইউনূসের সুপার ডিপ্লোমেসি এখন বাংলাদেশের কূটনীতির নতুন ব্র্যান্ড। সেই ব্র্যান্ডই বাংলাদেশকে বৈশ্বিক মহলে এক নতুন মর্যাদার আসনে বসাচ্ছে।

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator