close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

বিএনপির কার্যালয় উদ্বোধনে আওয়ামী লীগ নেতাদের ছড়াছড়ি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নড়িয়ার বিএনপি কার্যালয়ের উদ্বোধনে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতি ঘিরে শোরগোল শুরু হয়েছে স্থানীয় রাজনীতিতে। দলের অভ্যন্তরে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, যা বিএনপির উচ্চপর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছে। ন..

নড়িয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নে বিএনপির নতুন দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন ঘিরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের একাধিক স্থানীয় নেতার সরব উপস্থিতি দেখা যায়, যা দলের শীর্ষপর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে দিয়েছে।

ঘটনাটি ঘটে গতকাল শুক্রবার বিকেলে। নওপাড়া ইউনিয়নের নতুন কার্যালয়টি উদ্বোধনের সময় বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ফয়জুল হাসান বাদল মুন্সী, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মনি দেওয়ান, প্রচার সম্পাদক বোরহান তফাদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাপা তফাদার, সহ-সভাপতি মোস্তফা হাওলাদার, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও ইউপি মেম্বার নজু ছৈয়াল, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবুল বাশার খালাসী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক সিয়াম সিকদার, ক্রীড়া সম্পাদক ছাত্তার চৌধুরী এবং ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মিন্টু ছৈয়ালসহ অনেকে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা একে নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে 'লজ্জাজনক' বলেও মন্তব্য করেছেন। তাদের অভিযোগ, যারা এতদিন বিএনপির রাজনীতিকে দমন করেছে, তাদেরই এমন গুরুত্বপূর্ণ দলের অনুষ্ঠানে আহ্বান জানানো এবং বসার স্থান দেওয়া এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা। স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা দাবি করছেন, এ ঘটনা দলের আদর্শ ও শৃঙ্খলার চরম লঙ্ঘন।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি সামসুল আলম দাদন মুন্সীর উপস্থিতি এবং ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের মতে, তার প্রত্যক্ষ মদদেই আওয়ামী লীগের নেতারা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। যদিও দাদন মুন্সী দাবি করেছেন, তিনি কাউকে আনেননি, বরং তারা ‘দেখতে’ এসেছিলেন।

তিনি বলেন, “আমি কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে দাওয়াত দিইনি। কেউ যদি আসে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমরা তো খোলা অনুষ্ঠানে কথা বলেছি।”

তবে এ ব্যাখ্যা নেতাকর্মীদের মধ্যে সন্তুষ্টি আনতে পারেনি। বরং তারা মনে করছেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলার চেষ্টার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরণ বলেন, “ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত স্পষ্ট—আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর সঙ্গে বিএনপির সভা-সমাবেশে অংশ নেওয়া যাবে না। আমি এই বিষয়ে উপজেলা সভাপতির সঙ্গে কথা বলব এবং দলের মহাসচিবকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

এদিকে, স্থানীয় নেতাকর্মীদের বক্তব্য অনুযায়ী, বিএনপির ত্যাগী কর্মীরা এই ঘটনায় মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, যারা গত এক যুগ ধরে দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন, সেই আওয়ামী নেতাদের পাশে বসে দলীয় কর্মসূচি পালন করা ন্যূনতম রাজনৈতিক সচেতনতার প্রতিফলন নয়। অনেকেই একে 'তারেক রহমানের সঙ্গে বেইমানি' বলেও অভিহিত করেছেন।

নওপাড়া ইউনিয়নের এক বিএনপি নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগ যখন আমাদের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় হয়রানি করেছে, তখন সেই নেতাদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির চেষ্টার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটা বিএনপির ত্যাগী নেতাদের সঙ্গে প্রতারণা।”

উপসংহার:
এই ঘটনা বিএনপির ভেতরে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস সংকট ও নেতৃত্বের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ও নীতিগত অবস্থানের প্রতি যে শ্রদ্ধা থাকা উচিত ছিল, তা এই ঘটনার মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। উচ্চ পর্যায় থেকে কী ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

No comments found


News Card Generator