বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষমতা কেন্দ্রীক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ক্রমেই সংঘাতময় হয়ে উঠছে বলে মত বিশ্লেষকদের। ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন — বিএনপিকে প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়, বরং একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিযোগী হিসেবে দেখতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার (১৮ জুন), ঢাকায় আয়োজিত “গণ-অভ্যুত্থান–২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা” শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এই সভার আয়োজন ছিল ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূতি উপলক্ষে। সভায় প্রধান বক্তাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, যারা যথাক্রমে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন এবং ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন।
মির্জা আব্বাস তাঁর বক্তব্যে বলেন, “একটি শক্তিশালী পক্ষ বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে সুচতুরভাবে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। তারা চায় না বিএনপি আর কখনো ক্ষমতায় ফিরে আসুক।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বলি না যে যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যেতে চাই। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, এবং সেই লক্ষ্যেই গত ১৭-১৮ বছর ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি।”
আলোচনার এক পর্যায়ে মির্জা আব্বাস সতর্ক করে বলেন, “জাতিকে বিভক্ত রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে যদি জাতীয় ঐক্যকে ব্যবহার করা হয়, তবে দেশ কখনোই এগোবে না।”
তিনি মনে করেন, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম পারস্পরিক সম্মান ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার চর্চা থাকতে হবে। “একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য এটা অত্যন্ত জরুরি,” বলেন তিনি।
সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতেই হবে। আমাদের যে আন্দোলন চলছে তা নিছক দলের স্বার্থে নয়, বরং জাতির অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন।”
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিডিও বার্তায় উঠে আসে বিএনপির দীর্ঘ আন্দোলন, ত্যাগ ও তীব্র দমন-পীড়নের চিত্র। তিনি বলেন, “এই জাতিকে আরও একবার মুক্ত করতে হবে—এবার সেটা ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জুলাই শহীদদের পরিবারের সদস্যরা এবং গুম-খুনের শিকার পরিবারগুলোর স্বজনেরা। তাঁদের উপস্থিতিই প্রমাণ করে বিএনপির চলমান আন্দোলনের মানবিক মূল্য কতটা গভীর।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যিনি বলেন, “এই গণতান্ত্রিক সংগ্রাম শুধুই বিএনপির জন্য নয়, এটি পুরো জাতির মুক্তির সংগ্রাম।”
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
এই জাতীয় ঐক্যের আলোচনায় অংশগ্রহণ করে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি। এমন বহুদলীয় অংশগ্রহণ প্রমাণ করে, এই আন্দোলন একক কোনো দলের নয় — এটি একটি সমন্বিত গণআন্দোলনের রূপ নিচ্ছে।
মির্জা আব্বাসের বক্তব্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক অভিমত নয়, বরং তা বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরস্পরবিরোধী দলগুলোর জন্য একটি আহ্বানও। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক, কিন্তু সেটি যেন শত্রুতা না হয় — এটিই যেন হয় ভবিষ্যৎ রাজনীতির মূলমন্ত্র।