close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

বিডিআর বিদ্রোহ; জামিন পেলেন ৪০ জওয়ান

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
২০০৯ সালের ভয়াবহ বিডিআর বিদ্রোহের বিস্ফোরক মামলায় অবশেষে জামিন পেলেন কারাগারে থাকা ৪০ জন আসামি। আদালতের এই সিদ্ধান্ত নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে কেউ কেউ ছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তও।..

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত ভয়াবহ বিডিআর বিদ্রোহের বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগের পর অবশেষে জামিন পেলেন ৪০ জন সাজাপ্রাপ্ত জওয়ান।
ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়া ৮ মে এই জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী শাহাদাৎ হোসেন।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মো. বোরহান উদ্দিন জানান, জামিনপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত এবং এমনকি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও রয়েছেন।
তিনি বলেন, “আদালত প্রতিটি আসামির কেস এবং নথিপত্র বিশ্লেষণ করে সন্তুষ্ট হয়ে জামিন প্রদান করেছেন। তবে যাদের ক্ষেত্রে সন্তোষজনক ভিত্তি পাওয়া যায়নি, তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে।”

জামিনপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন:

রেজাউল করিম, শাজাহান, রফিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মো. শামীম, ওয়ালি উল্লাহ, হাবিবুর রহমান, তারিকুল ইসলাম, বনি আমিন চৌধুরী, মো. এ বারিক, ইমতিয়াজ আহমেদ নবীন, মোয়াজ্জেম হোসেন, মিজানুর রহমান, সিদ্দিকুর জামান জোয়ার্দার (লিটন), মো. এ মোনাফ, আকিদুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, কৌতুক কুমার সরকার, মো. সালাউদ্দিন, সোহরাব হোসেন, কামাল হোসেন, মো. ইশহাক, দারুল ইসলাম, সুমন চক্রবর্তী, আবু সাঈদ, সেজান মাহমুদ, মো. সেলিম, বিধান কুমার সাহা, মাসুম হাসান, ফিরোজ মিয়া, তাপস কুমার বিশ্বাস, কামাল মিয়া, নূর-এ-আলম মিয়া, এনামুল হক, শফিকুল ইসলাম, রবিউল আলম এবং আল আমিন।

এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি একই আদালতে আরও ১৭৮ জন আসামিকে জামিন দেওয়া হয়। ২৩ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা।

পিলখানা বিদ্রোহ: এক ভয়াবহ ইতিহাস

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত বিদ্রোহে নির্মমভাবে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন।
বিদ্রোহের পর বিডিআরের বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় রায় ঘোষণা করে:

  • ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড,

  • ১৬০ জনের যাবজ্জীবন,

  • ২৫৬ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড
    এবং

  • ২৭৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ে:

  • ১৩৯ জনের ফাঁসি বহাল,

  • ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং

  • ২২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড
    প্রদান করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের আগ-পরে মিলিয়ে মোট ৫৪ জন আসামির মৃত্যু হয়েছে

বিস্ফোরক মামলায় বিচার ও আপিল প্রক্রিয়া

বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০১০ সালে ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়
এই মামলায় একাধিক ধাপে জামিন মিলেছে অনেকের, আবার কিছু আবেদন এখনো বিচারাধীন।

রাষ্ট্রপক্ষ ইতিমধ্যে ৮৩ জনের খালাস ও সাজা হ্রাসের বিরুদ্ধে আপিল করেছে।
এই আপিলগুলো বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

নতুন তদন্তের দাবি ও কমিশন গঠন

সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে আবারও বিডিআর বিদ্রোহে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি উঠে এসেছে।
১৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ দাখিল করে শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
পরবর্তীতে ২৪ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে প্রধান করে ৯০ দিনের জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার।


 

বিডিআর বিদ্রোহ ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ভয়ংকর ও রক্তাক্ত অধ্যায়।
সেই ঘটনার দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় নতুন মোড় এসেছে এই ৪০ জন জওয়ানের জামিনের মধ্য দিয়ে।
নতুন সরকারের অধীনে তদন্ত কমিশনের কাজ শুরু হওয়ায় অনেকেই আশা করছেন, এ ঘটনার আড়ালে থাকা সব সত্য একদিন প্রকাশ পাবে এবং প্রকৃত দোষীরা আইনের আওতায় আসবে।

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator