ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা আবারো চরমে পৌঁছেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বুধবার ঘোষণা দিয়েছেন যে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। এই হামলার জবাবে পাকিস্তান ‘শক্তিমত্তা ও নির্ভুল কৌশলে’ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বলে জানান তিনি।
জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ বলেন, “পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছে এবং ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শক্তভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।”
এর আগেই পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (ISPR) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানান যে, ভারতীয় যুদ্ধবিমান পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। তার পাল্টা জবাবে পাকিস্তানি বিমান ও সামরিক বাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে ‘বৈপ্লবিক প্রতিশোধ’ নেয়।
ভারতীয় অভিযানের নাম: 'অপারেশন সিন্দুর'
ঘটনার সূত্রপাত গত ২২ এপ্রিল। কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি প্রাণঘাতী হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। ভারত দাবি করে, এই হামলার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানের ভূখণ্ড থেকে। এর জবাবে ভারত শুরু করে ‘অপারেশন সিন্দুর’। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, এই অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানের জম্মু-কাশ্মীর দখলকৃত অঞ্চলের সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়, “অপারেশন সিন্দুর হচ্ছে একটি নির্ভুল ও লক্ষ্যভিত্তিক সামরিক পদক্ষেপ, যাতে সন্ত্রাসের ঘাঁটি ধ্বংস করা হচ্ছে।”
পাল্টা প্রতিশোধে পাকিস্তান
পাকিস্তান এই হামলাকে ‘নিরপরাধ নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ভারতীয় আগ্রাসনের কড়া জবাব দিচ্ছে এবং যেকোনো মূল্যে ‘রক্তের বদলা রক্ত’ নেওয়া হবে।
জিও নিউজের নিরাপত্তা সূত্রগুলো দাবি করেছে, ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের বিমান বাহিনী ভারতের ৫টি আধুনিক যুদ্ধবিমান গুঁড়িয়ে দিয়েছে। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এ দাবির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এখনো পাওয়া যায়নি।
সীমান্তে ভয় ও উদ্বেগ
সীমান্তবর্তী আজাদ কাশ্মীর অঞ্চলে যুদ্ধের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, জনগণের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে। বহু বাসিন্দা আশঙ্কা করছেন, এই দ্বন্দ্ব পুরোপুরি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
কাশ্মীর নিয়ে আগেও যুদ্ধের মুখে পড়েছে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। তবে এবারের পরিস্থিতি আরও জটিল এবং বিস্ফোরক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে?
এই সামরিক সংঘর্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন ইতোমধ্যে দুই দেশকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই উত্তেজনা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, তবে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান উত্তেজনা শুধু দুই দেশের মধ্যে নয়, গোটা অঞ্চলজুড়েই অস্থিরতা তৈরি করেছে। সামান্য ভুল বোঝাবুঝিও এবার ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—কে আগে পিছু হটবে? আর ততক্ষণ পর্যন্ত আকাশে গর্জন করবে যুদ্ধবিমান, আর সীমান্তে জমে থাকবে আতঙ্কের ঘনঘটা।