যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক বার্ষিক প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে এক নতুন অস্থিরতার সংকেত পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চীনের কমিউনিস্ট সরকার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাবি করছে এবং এটি তারা নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করার চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই আকাঙ্ক্ষাকে চীনা শীর্ষ নেতাদের 'মূল লক্ষ্য' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বেইজিং মনে করে, ভারতের এই অঞ্চলটি তাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা তারা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে হাসিল করতে চায়।
এই পরিকল্পনার মূলে রয়েছে 'চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণ' নামক এক উচ্চাভিলাষী প্রজেক্ট। ২০৪৯ সালের মধ্যে এই লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে বেইজিং। চীনা নেতৃত্ব বিশ্বাস করে, যতক্ষণ পর্যন্ত অরুণাচল প্রদেশ, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের এই পুনর্জাগরণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। বিশেষ করে তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করাকে তারা একটি 'স্বাভাবিক প্রয়োজনীয়তা' হিসেবে মনে করে। এই আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে ভারত একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ালেও চীন তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে কোনো কার্পণ্য করছে না।
প্রতিবেদনের ভাষ্যমতে, চীন কেবল সীমানা বাড়ানোতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তারা বিশ্বব্যাপী একটি আধিপত্যকামী সেনাবাহিনী তৈরি করতে চায়। তাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি বাহিনী গড়ে তোলা, যারা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যেকোনো ধরণের প্রতিকূল অভিযানে জয়ী হতে পারবে। এই সামরিক আধুনিকায়ন সরাসরি ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। অরুণাচল নিয়ে বেইজিংয়ের এই মনোভাব ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আগামী দিনগুলোতে এশিয়ার মানচিত্র পুনর্নির্ধারণের মতো জটিল পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া



















