close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভারতের চমকপ্রদ সিদ্ধান্তে কাঁপছে আঞ্চলিক বাণিজ্য: ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল, বিপাকে বাংলাদেশ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারতের হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে গেল বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের আবহে এই সিদ্ধান্তে নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে অন..

ভারতের নতুন সিদ্ধান্তে আঞ্চলিক বাণিজ্যে বড় ধাক্কা, বিপাকে বাংলাদেশ

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্যে এক নতুন শঙ্কার সূচনা হয়েছে ভারতের সাম্প্রতিক এক সিদ্ধান্তের কারণে। বাংলাদেশের জন্য ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে রপ্তানির সুযোগ সুবিধা, যেটিকে বলা হয় ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা, সেটি হঠাৎ করেই বাতিল করেছে ভারত সরকার। ভারতের এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে বাণিজ্যিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে:

৯ এপ্রিল, মঙ্গলবার ভারতীয় রাজস্ব দফতরের শীর্ষ সংস্থা সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (CBIC) এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, তারা ২০২০ সালের ২৯ জুন জারিকৃত আদেশটি বাতিল করেছে। সেই আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে রপ্তানি হওয়া পণ্যবাহী কনটেইনার বা ক্লোজ-বডি ট্রাক ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারত। সেটিই এখন থেকে আর কার্যকর থাকবে না।


বাণিজ্যিক প্রেক্ষাপটে এর প্রভাব কী?

এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের সঙ্গে যে ত্রিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় বাণিজ্য বাংলাদেশ ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে করে আসছিল, তা বড় ধরনের বিঘ্নের মুখে পড়বে। এর ফলে কাঁচামাল, রপ্তানি পণ্য এবং লজিস্টিক খরচ সব ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

জিটিআরআই'র পর্যবেক্ষণ:

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI)-এর মতে, ভারত এখন থেকে পুরোপুরি এই সুবিধা প্রত্যাহার করেছে। যদিও সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগে যেসব পণ্যবাহী যানবাহন ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে, সেগুলো বিদ্যমান নিয়মে দেশ ত্যাগ করতে পারবে। তবে পরবর্তী সময়ে নতুন করে আর এই সুবিধা পাবে না কোনো রপ্তানিকারক।


কূটনৈতিক ইঙ্গিত কি রয়েছে এতে?

GTRI প্রধান এবং ভারতের সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা অজয় শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্তের পিছনে ভূরাজনৈতিক কৌশলগত কারণ থাকতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের লালমনিরহাট এলাকায় চীনের সহায়তায় একটি বিমানঘাঁটি পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা ও “চিকেন নেক” করিডোরের নিকটে কৌশলগত ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের উদ্বিগ্ন করেছে।

এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন কৌশলগত বার্তা দেয়, অন্যদিকে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সম্পর্কেও চাপ ফেলছে। দুই দশক ধরে ভারত বাংলাদেশের জন্য একতরফা শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে আসলেও, সম্প্রতি ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারসাম্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত স্পষ্ট।


বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) নিয়ম লঙ্ঘন?

বহু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ইতোমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) গ্যাট ১৯৯৪-এর ধারা ৫ অনুসারে, স্থলবেষ্টিত দেশগুলোর (যেমন নেপাল ও ভুটান) জন্য অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়। ট্রানজিট পণ্যে বিলম্ব, অপ্রয়োজনীয় বাধা বা অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ নিষিদ্ধ।

এই প্রসঙ্গে অনেকেই বলছেন, ভারতের এমন আচরণ WTO’র নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাতে পারে এবং এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে পড়বে।


বাংলাদেশের করণীয় কী হতে পারে?

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে দ্রুত কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে এবং বিকল্প রপ্তানি পথ ও কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের ব্যবহার, বঙ্গোপসাগরের নৌপথ এবং আঞ্চলিক সংহতির নয়া জোট গঠনের দিকে নজর দিতে হবে।

একইসাথে, বাংলাদেশের উচিত WTO-র সঙ্গে আলোচনা করা এবং প্রয়োজন হলে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উত্থাপন করা।


 

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য কাঠামোকেই এক নতুন অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। এখন সময়, এই সংকটকে মোকাবিলা করে এক নতুন বাণিজ্যিক কৌশল তৈরির—যা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য হবে কার্যকর ও টেকসই।

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator