close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ভারতে গো লা গু লি, নি হ ত ১০

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভারতের মণিপুরে সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভয়াবহ গোলাগুলিতে প্রাণ হারাল ১০ বিদ্রোহী। সীমান্তপারের মিয়ানমার ঘাঁটি থেকে ফিরে নতুন হামলার ছক করছিল তারা। সংঘর্ষ ঘিরে ফের উত্তপ্ত রাজ্য।..

মণিপুরে ভয়াবহ সংঘর্ষ: সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত ১০ বিদ্রোহী, উদ্ধার বিপুল অস্ত্র

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অশান্ত রাজ্য মণিপুর ফের ভয়াবহ সহিংসতায় কেঁপে উঠেছে। রাজ্যের প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ১০ জন বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স নিশ্চিত করেছে এই তথ্য।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিহতরা সবাই ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি গোষ্ঠীর সদস্য, যারা ২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর সেদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে তারা মিয়ানমার থেকে ফিরে এসে ভারতীয় ভূখণ্ডে আবারও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছিল।

সেনাবাহিনী তাদের অফিসিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতিতে জানায়, “এই অভিযানে ১০ জন সশস্ত্র বিদ্রোহীকে নিরস্ত করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। অঞ্চলটি এখন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।”

মিয়ানমার সীমান্ত ঘিরে উদ্বেগ

২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটি কার্যত গৃহযুদ্ধে নিমজ্জিত। এর প্রভাব পড়েছে ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতেও। ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং অনেকাংশে অরক্ষিত, যা বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশের জন্য একটি আদর্শ পথ হয়ে উঠেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সীমান্তের অরক্ষিত অবস্থান এবং মিয়ানমারে চলমান অস্থিরতা এই অঞ্চলে বিদ্রোহী কর্মকাণ্ডকে আরও উসকে দিচ্ছে। মণিপুরের মতো রাজ্যগুলোতে এই কারণেই সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থানে থাকতে হচ্ছে।

জাতিগত সহিংসতার পেছনের জটিল বাস্তবতা

২০২৩ সালের মে মাস থেকে মণিপুরে চলমান জাতিগত সহিংসতা এখনো থামার কোনো লক্ষণ নেই। রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতি জনগোষ্ঠী এবং পাহাড়ি অঞ্চলের সংখ্যালঘু কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। এই সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২৬০ জন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।

এই সহিংসতার পেছনে রয়েছে একাধিক রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভাজন। মূল উপত্যকার মেইতিদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব অনেক বেশি, যেখানে কুকিরা অভিযোগ করছে যে, তাদের জমি, অধিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তা খর্ব করা হচ্ছে। কুকি নেতারা সরাসরি দাবি করছেন—মেইতিদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাই এই সংঘর্ষের মূল কারণ।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ

রাজ্যটিতে সহিংসতার মাত্রা এতটাই তীব্র যে ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ নানাবিধ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে আসছে নিয়মিত। আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো ইতিমধ্যে এই পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখছে এবং ভারত সরকারের কাছে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হচ্ছে।

রাজনৈতিক ও সামরিক বাস্তবতা

৩২ লাখ জনসংখ্যার রাজ্য মণিপুর এখন কার্যত দ্বিখণ্ডিত। একদিকে, মেইতি সম্প্রদায়ের আধিপত্য; অন্যদিকে কুকিদের নিরাপত্তাহীনতা—এই দুইয়ের সংঘর্ষেই রক্তাক্ত হচ্ছে রাজ্যের মাটি। সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে ১০ বিদ্রোহী নিহত হওয়া যেমন সেনাবাহিনীর সাফল্য, তেমনি এটি বড় ধরনের প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও তৈরি করছে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যতদিন না ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত সুরক্ষিত করা যাচ্ছে এবং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্য বোঝাপড়া তৈরি হচ্ছে, ততদিন মণিপুরের এই অস্থিরতা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

উপসংহার

মণিপুরের রক্তাক্ত প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক সেনা অভিযানে বিদ্রোহীদের নিহত হওয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একটি ধাপ হতে পারে, তবে এটি সমস্যার শিকড় ছেঁটে ফেলতে পারছে না। সীমান্ত সুরক্ষা, জাতিগত সমঝোতা ও মানবাধিকার রক্ষার বাস্তব ব্যবস্থা না থাকলে এই আগুন যে আরও ছড়িয়ে পড়বে, তা অনিবার্য।

没有找到评论


News Card Generator