আবহাওয়ার কবলে। টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসে গত তিন দিনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৪ জন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, আজ সোমবার (২ জুন) ভারতের বিমানবাহিনী এবং আধা-সামরিক বাহিনী ‘আসাম রাইফেলস’কে উদ্ধার অভিযানে নামাতে বাধ্য হয়েছে।
ভারতের জাতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, উত্তর সিকিমে আটকে পড়েছেন প্রায় ১,২০০ পর্যটক। রবিবার (১ জুন) তাদের উদ্ধার অভিযানের পরিকল্পনা থাকলেও নতুন করে ভূমিধস শুরু হওয়ায় অভিযান স্থগিত করতে হয়। এর আগে, ২৯ মে মুনশিথাং এলাকায় একটি পর্যটকবাহী গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিস্তা নদীতে পড়ে যায়। সেই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৮ জন নিখোঁজ।
ত্রিপুরা ও মেঘালয়ের পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। মেঘালয়ের অন্তত ১০টি জেলা আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আসাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোর একটি। ইতোমধ্যেই রাজ্যের ১৯টি জেলার ৭৬৪টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে সাড়ে তিন লাখ। ব্রহ্মপুত্রসহ ছয়টি বড় নদীর জলস্তর বিপদসীমার ওপরে রয়েছে। বিশেষ করে ডিব্রুগড় ও নিমাতিঘাট এলাকায় পরিস্থিতি অতি সংকটাপন্ন।
আসাম সরকার জানায়, নতুন করে আরও দুইজনের মৃত্যু হওয়ায় রাজ্যে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০। বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় রাজ্য প্রশাসন ১০ হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে গেছে।
এদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যগুলোকে সর্বোচ্চ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। আসাম, সিকিম ও অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী এবং মণিপুরের রাজ্যপালের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে কথা বলেছেন তিনি। শাহ বলেন, “উত্তর-পূর্ব ভারতের এই সংকটজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোদি সরকার জনগণের পাশে আছে। প্রয়োজন হলে আরও সহায়তা পাঠানো হবে।”
আসাম রাজ্যের মন্ত্রী জয়ন্ত মল্ল বরা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৪ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেবে।
বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার আঘাত বিশেষজ্ঞদেরও চিন্তিত করে তুলেছে। আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, পরবর্তী কয়েকদিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বিভিন্ন রাজ্য সরকার সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।



















