বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ইতিহাসে গত কয়েক দশক ধরে ভারতের প্রভাব ছিল অনস্বীকার্য। তবে ২০২৪ পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে দৃঢ়তা প্রদর্শন করছেন, তাকে অনেকে 'মেরুদণ্ড সোজা করার লড়াই' হিসেবে অভিহিত করছেন। প্রবীণ সাংবাদিক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি তার সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে ড. ইউনূসের এই ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি মনে করেন, শত বছরের ইতিহাসে দিল্লির অন্যায্য চাপের মুখে কোনো বাঙালি শাসক এভাবে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেননি।
রনি তার আলোচনায় উল্লেখ করেন, গত ১৫ মাস ধরে ভারতীয় মিডিয়া ও কূটনৈতিক মহল থেকে নানামুখী চাপ এবং অপপ্রচার চালানো সত্ত্বেও ড. ইউনূস পিছু হটেননি। ভারতের ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিপরীতে বাংলাদেশও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতীয়দের জন্য ভিসা সীমিত করেছে এবং ভারতীয় হাই কমিশনারকে তলব করেছে। এই পদক্ষেপগুলোকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে একটি মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। অতীতে যেখানে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা ভারতীয় দূতাবাসে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব থাকতেন, সেখানে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন।
প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে যে, ভারত বাংলাদেশের ওপর আধিপত্য বজায় রাখতে অতীতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছে। সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা কিংবা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে তারা ঢাকাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকার চীন ও পাকিস্তানের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়া এবং নিজস্ব স্বার্থে অটল থাকার যে নীতি গ্রহণ করেছে, তা দিল্লির জন্য একটি বড় বার্তা। গোলাম মাওলা রনি মনে করেন, ফলাফল যাই হোক না কেন, এই প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর বাংলাদেশের মানুষের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করছে।
পরিশেষে বলা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই আপোষহীন অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুসংহত করবে এবং দিল্লির সাথে ভবিষ্যতে একটি সম্মানজনক ও সমমর্যাদার সম্পর্কের পথ প্রশস্ত করবে।



















