### ভূমিকা
বাংলাদেশে এবং বিশ্বব্যাপী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যার প্রচেষ্টা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি জরিপে দেখা যায়, শিক্ষা, সামাজিক মাধ্যম, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ঘাটতি এবং পারিবারিক ও সামাজিক চাপ এই প্রবণতার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করছে। এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
### পরিসংখ্যানের ঝলক
২০২৪ সালে বাংলাদেশে কমপক্ষে ৩১০ জন ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে ৬৫.৭ শতাংশ কিশোর (১৩-১৯) ছিল। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫৩২ জন এবং ২০২৩ সালে ৫১৩ জন। যদিও সংখ্যায় সামান্য হ্রাস দেখা যাচ্ছে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে গণমাধ্যমে কম প্রকাশ এবং রিপোর্টিং পদ্ধতির তারতম্যই এই পার্থক্য তৈরি করেছে।
বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ ২৬ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করেন এবং এর তিন ভাগের দুই ভাগই নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে ঘটে। ১৫-২৯ বছর বয়সী তরুণদের মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণও এটি। আত্মহত্যা প্রচেষ্টার সংখ্যা মৃতের তুলনায় ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি হতে পারে।
### প্রধান চালকসমূহ
**একাডেমিক চাপ:** ২০২৪-এর এক গবেষণায় দেখা যায়, আত্মহত্যা-পথ বেছে নেওয়া শিক্ষার্থীদের ১৪.২ ভাগই সরাসরি পরীক্ষার ভয় বা ফলাফল-সংকটে পড়ে।
**সামাজিক মাধ্যম ও সাইবার বুলিং:** UNICEF-এর ২৯ হাজার শিক্ষার্থীর অনলাইন জরিপে দুই-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা "ভুয়া খবর-মিথ্যা তথ্য"কে সবচেয়ে বড় মানসিক চাপ বলে উল্লেখ করেছে।
**মানসিক-স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঘাটতি:** দেশে প্রশিক্ষিত মনোরোগ-চিকিৎসক ও কাউন্সেলরের অভাব তীব্র এবং ‘মানসিক রোগ মানেই দুর্বলতা’—এই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি সাহায্য খুঁজতে বাধা সৃষ্টি করে।
**অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বেকারত্ব:** ১৬ শতাংশ যুব-বেকারত্ব—গত তিন দশকের সর্বোচ্চ।
**মহামারির প্রভাব:** কোভিড-পরবর্তী আর্থিক টানাপড়েন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিচ্ছিন্নতা তরুণ-মনের স্থিতি নড়বড়ে করেছে।
### বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্কুল-কলেজ পর্যায়ে মানসিক-স্বাস্থ্য ক্লিনিক না থাকায় শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবেন বুঝতে পারেন না। বিএসএমএমইউ-এর একজন বিশেষজ্ঞ যোগ করেন, “পরিবারকে চাই শিশুর মনো-ঘনিষ্ঠ তদারকি; ব্যর্থতা-ভীতি কমাতে খোলামেলা আলোচনা দরকার।”
### প্রতিরোধের পথ
১. **স্কুল-কলেজে মনোরোগ-কাউন্সেলিং সেল:** সরকার-বেসরকারি অংশীদারিত্বে দ্রুত মানসিক-স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ।
2. **ডিজিটাল সেফটি আইন ও ক্যাম্পেইন:** UNICEF-এর অনলাইন-নিরাপত্তা কর্মসূচির মতো উদ্যোগে সাইবারবুলিং-বিরোধী শিক্ষা।
3. **জব-স্কিল অ্যালাইনমেন্ট:** পাঠ্যক্রম আধুনিকীকরণ ও শিল্পের চাহিদা-মাফিক কারিগরি প্রশিক্ষণ বাড়ানো।
4. **পারিবারিক-সামাজিক সচেতনতা:** পরীক্ষায় ‘ব্যর্থ’ শব্দের বদলে ‘শেখা চলমান’ সংস্কৃতি গড়ে তোলা।
5. **গবেষণা ও ডাটা-রিপোজিটরি:** আত্মহত্যা-চেষ্টা সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য জাতীয় ডাটাবেস তৈরি—নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে।
### সাহায্য চাইলে কোথায় যাবেন
কান পেতে রই (Kaan Pete Roi)—২৪×৭ হেল্পলাইন: ০১৭৭৯ ৫৫৪ ৩৯১
চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮—বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
মেন্টাল হেল্পলাইন ১৬২৬৩—স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
আপনি, বা আপনার কোনো পরিচিত ব্যক্তি, যদি অবিলম্বে সহায়তার প্রয়োজন বোধ করেন, দয়া করে উপরের নম্বরগুলিতে যোগাযোগ করুন অথবা নিকটস্থ হাসপাতালে দ্রুত পৌঁছান। আপনি একা নন, সহায়তা পাওয়া যায়।
### উপসংহার
বাংলাদেশের তরুণদের মানসিক-স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ এখনই জরুরি। আত্মহত্যা প্রবণতা হ্রাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। সমাজের সব স্তরে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।



















