ভারতের সাবেক মন্ত্রীর মুখে আশঙ্কা: "বাংলাদেশ আমাদের দুশ্চিন্তার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে"
কলকাতা, ২৬ মে:
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে প্রকাশ্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা ও বহরমপুরের সাবেক সংসদ সদস্য অধীর রঞ্জন চৌধুরী। দিল্লি সফর শেষে সোমবার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের প্রতিবেশী। ওখানে অস্থিরতা হলে তা সীমান্ত পেরিয়ে আমাদের ওপর প্রভাব ফেলবেই। তাই আমরা এখন বাংলাদেশ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত।”
xদিল্লি ফেরত পথে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ
দিল্লি থেকে রাজনৈতিক বৈঠক শেষ করে ফিরে অধীর রঞ্জন যখন বিমানবন্দরে নামলেন, তখন সাংবাদিকরা তাকে ঘিরে ধরেন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পরিস্থিতি, আঞ্চলিক অস্থিরতা এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপোড়েন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “বাংলাদেশে যে ধরণের রাজনৈতিক বিভাজন, জনআন্দোলন ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে, তা আমাদের নিরাপত্তার প্রশ্ন তৈরি করে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই অস্থিরতা সীমান্ত অঞ্চলে চোরাচালান, অনুপ্রবেশ, এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। আমাদের প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকারকে এ নিয়ে এখনই সজাগ হতে হবে।”
পুরনো বিতর্ক নতুনভাবে ফিরে এলো
অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মুখে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নতুন নয়। অতীতেও তিনি বিতর্কিতভাবে বলেছিলেন, “মালদা, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর — এই সমস্ত পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো বাংলাদেশের দখলে যাওয়ার দাবি তুলতে পারে ওরা।” সে সময় তার এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
তিনি তখন বলেছিলেন, “বাংলাদেশ বিষয়টি শুধু রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি একটি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন। ঠুনকো রাজনীতি করলে এক সময় এই সংকট ক্যানসারের মতো সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে।”
মমতার প্রশাসনকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান
এদিকে, সীমান্তবর্তী এলাকায় ভাঙন, নদীপ্রবাহ, ড্রোন শনাক্তের মতো ঘটনায় ইতিমধ্যেই চাপে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন। অধীর বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বলছি, সীমান্তজেলায় প্রশাসনকে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। বাংলাদেশ যদি অস্থিরতায় যায়, তাহলে তার ধাক্কা আমাদেরও সামলাতে হবে।”
বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, অধীর রঞ্জনের মন্তব্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে। বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক তুলনামূলক ভালো থাকলেও, অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বা শরণার্থী সংকটের আশঙ্কা থেকে যায়।
তারা মনে করছেন, “বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে জরুরি। কারণ শুধু সীমান্তই নয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বাংলাদেশ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
ভারতের একজন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার মুখে সরাসরি ‘বাংলাদেশ দুশ্চিন্তার কারণ’ হয়ে উঠেছে — এই বক্তব্য কূটনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামনে রেখে বাংলাদেশ ইস্যু হয়তো ভারতের রাজনীতিতে আরও গুরুত্ব পাবে।
অধীর রঞ্জনের এ হুঁশিয়ারি কি ভারতের পররাষ্ট্রনীতি প্রভাবিত করবে? সীমান্তজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার হবে? বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেবে — এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখন সময়ই দেবে।
		
				
			


















