ইসরায়েলি সাম্প্রতিক হামলায় রক্তাক্ত ইরান এবার তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে কঠোর বার্তা দিয়েছে। ইরানের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ আলি গৌদারজি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, কোনো প্রতিবেশী দেশের ভূমি যেন ইরানবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত না হয়।
আমরা আশা করি আমাদের প্রতিবেশীরা নিজেদের ভূখণ্ড থেকে পরিচালিত শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড রুখে দেবে। এটি আমাদের সুসম্পর্ক এবং পারস্পরিক আস্থার প্রশ্ন।
তার ভাষায়, বন্ধুত্ব ও সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণের অংশ হিসেবেই তারা আশা করছেন,
আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য করা এড়াতে প্রতিবেশীরা দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেবে।
এই বার্তাকে শুধু একটি কূটনৈতিক আহ্বান না বলে, বরং এটি একটি সুস্পষ্ট কৌশলগত সতর্কবার্তা বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ‘মেহের’ জানায়, গত ১৩ জুন ভোরবেলা ইসরায়েল হঠাৎই ইরানি ভূখণ্ডে ব্যাপক হামলা শুরু করে। শুধু সামরিক ঘাঁটি নয়, পারমাণবিক স্থাপনা এবং আবাসিক এলাকাও তাদের নিশানায় পরিণত হয়।
এ হামলায় নিহত হন বহু সেনা কর্মকর্তা, পরমাণু প্রকৌশলী এবং বেসামরিক নাগরিক। ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্র, ইসফাহানের নাতানজও আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তেহরান প্রতিহিংসার রাস্তায় থেমে থাকেনি। আনাদোলু এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরান এর পরপরই ৪০০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং অগণিত ড্রোন ইসরায়েল অভিমুখে নিক্ষেপ করে। ইসরায়েলি সরকারের প্রেস অফিস স্বীকার করেছে, এতে অন্তত ৪০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
তবে এসব টার্গেট কোথায় ছিল—তা তারা জানায়নি।
ইরানি গণমাধ্যমগুলো বলছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ইরানে ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১,৩০০ জনেরও বেশি। নিহতদের মধ্যে আছেন গুরুত্বপূর্ণ সেনা কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং অসংখ্য নিরীহ বেসামরিক মানুষ।
এই মুহূর্তে দেশটির হাসপাতালগুলোতে চলছে জরুরি চিকিৎসা কার্যক্রম। রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে তিন দিনের শোক।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের এই আহ্বান শুধু সতর্কতা নয়—এটি এক ধরনের প্রতিরক্ষামূলক বার্তা। ইরান চায় না, তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো অক্ষ গড়ে উঠুক। বিশেষ করে এমন সময়, যখন মধ্যপ্রাচ্য আবারো এক ভয়ঙ্কর সংঘর্ষের মুখে।
তেহরান এখন স্পষ্ট করেই বলছে—যদি কোনো দেশ নিজের মাটি থেকে ইরানবিরোধী হামলাকে আশ্রয় দেয়, তবে সেই মাটিকে তারাও যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করবে।
বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, সংঘর্ষ দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আর যদি প্রতিবেশী দেশগুলো ইরানের সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করে, তবে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে যুদ্ধের আগুন জ্বলতে পারে।
এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই—ইসরায়েল ও ইরান কী সরাসরি যুদ্ধের পথে হাঁটছে? আর বাকি বিশ্ব কতটা প্রস্তুত সেই অস্থিরতার মুখোমুখি হতে?