অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিজটাউন টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ঘটে গেলো এমন এক ঘটনা, যা নতুন করে বিতর্কের আগুন ছড়াল আম্পায়ারিং নিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের প্রধান কোচ ড্যারেন স্যামি সরাসরি টিভি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আইসিসির শাস্তির মুখে পড়েছেন। ম্যাচ ফির ১৫ শতাংশ জরিমানার পাশাপাশি তাঁর নামের পাশে যোগ হয়েছে একটি ডিমেরিট পয়েন্ট।
গত বৃহস্পতিবার ব্রিজটাউন টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে স্যামি প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝাড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার টিভি আম্পায়ার অ্যাড্রিয়ান হোল্ডস্টকের বিরুদ্ধে। ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথের সঙ্গে দেখা করে স্যামি জানতে চান, কীভাবে এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়! শুধু এখানেই থেমে থাকেননি তিনি, বরং ইংল্যান্ড সফরের তিন ওয়ানডে ম্যাচেও হোল্ডস্টকের আম্পায়ারিং নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
দ্বিতীয় দিনের খেলা ঘিরে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে স্যামির দল বিস্মিত। প্রথমটি রোস্টন চেজের এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত, দ্বিতীয়টি শাই হোপের বিতর্কিত ক্যাচ। চেজ যখন ৪৪ রানে ব্যাট করছিলেন, তখন প্যাট কামিন্সের একটি বলে এলবিডব্লু হন এবং সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন। হোল্ডস্টক আলট্রাএজ প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখান, ব্যাট ও বলের মাঝে দূরত্ব রয়েছে। যদিও কাছাকাছি দুটি ছোট স্পাইক দেখা গিয়েছিল, যা চেজের মতে বল ব্যাটে লাগার প্রমাণ।
অন্যদিকে হোপের ক্যাচ নিয়েও রহস্য। ওয়েবস্টারের বল ব্যাটের কানায় লেগে পেছনের দিকে যায়, উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি সেটি তালুবন্দি করেন। কিন্তু ক্যাচ নেওয়ার সময় বল ঘাসে লেগেছে কি না, তা নিয়ে জোর প্রশ্ন ছিল। হোল্ডস্টক সিদ্ধান্ত দেন অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে। এই সিদ্ধান্তেই ফুঁসে ওঠেন ড্রেসিংরুমে বসা স্যামি।
স্যামি বলেন, “এই নির্দিষ্ট আম্পায়ারকে (হোল্ডস্টক) ঘিরে বিষয়টা আমার মনে প্রথম আসে ইংল্যান্ড সফর থেকেই। এটা হতাশাজনক। আপনি এমন অবস্থায় যেতে চান না যেখানে নির্দিষ্ট কোনো আম্পায়ারের প্রতি অবিশ্বাস জন্মায়। কিন্তু বারবার একই দলের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গেলে প্রশ্ন উঠবেই।”
আইসিসির আচরণবিধির ২.৭ ধারা অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা ম্যাচ অফিসিয়ালদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সমালোচনা করা নিষিদ্ধ। সেই ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে স্যামির বিরুদ্ধে। যদিও গত ২৪ মাসে এটিই তাঁর প্রথম ‘অপরাধ’। তাই শাস্তি হয়েছে তুলনামূলক হালকা—ম্যাচ ফির ১৫ শতাংশ জরিমানা ও এক ডিমেরিট পয়েন্ট।
ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথের দেওয়া শাস্তি মেনে নিয়েছেন স্যামি, ফলে আলাদা কোনো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি।
স্যামির পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রোস্টন চেজও ম্যাচ শেষে আম্পায়ারিং নিয়ে খোলাখুলি হতাশা প্রকাশ করেন। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোনো শাস্তি নেওয়া হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, আম্পায়ার হোল্ডস্টককে ঘিরে বিতর্ক আরও বাড়তে পারে কারণ সিরিজের বাকি দুই টেস্টেও মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও সামনে উঠে এল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ের মান, পক্ষপাত এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে অস্পষ্টতার প্রশ্ন। স্যামির মতো একজন সম্মানিত কোচ যদি প্রকাশ্যে এমন প্রশ্ন তোলেন, তাহলে আইসিসির উচিত হবে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা।



















