জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত আলোচিত গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আজ বুধবার (২৫ জুন) তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। এই সময় পলকের মাথায় হেলমেট এবং বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল। তাকে ঘিরে ছিল কড়া পুলিশি নিরাপত্তা।
সকাল সাড়ে ১০টায় আদালত চত্বরে প্রবেশ করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “পলক ভাই, সামনে তো নির্বাচন। জুলাই গণহত্যার জন্য জাতির কাছে কি ক্ষমা চাইবেন?” সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে সরাসরি জবাব দেন পলক। তিনি বলেন, “আমি তো কোনো অপরাধ করিনি। আমি নির্দোষ।”
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে পলক জানান, কারাগারে তিনি বই পড়ে সময় কাটাচ্ছেন। বিভিন্ন রকম সাহিত্যের বই ও আত্মউন্নয়নমূলক বই পড়ছেন বলে জানান তিনি। তার বক্তব্যে ধরা পড়ে আত্মবিশ্বাস ও রাজনৈতিকভাবে সংগ্রামী মানসিকতা।
এদিন পলককে হাজির করা হয় ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালতে। একইসঙ্গে সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকেও হাজির করে পুলিশ। আদালতের কাছে পুলিশ দাবি করে, হাতিরঝিল থানার রমজান হত্যা মামলায় এই দুই নেতাকে গ্রেফতার দেখানো হোক। আদালত শুনানি শেষে সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে পুলিশি আবেদন মঞ্জুর করেন।
এই মামলার সূত্রপাত ঘটে গত বছরের ১৯ জুলাই। রাজধানীর পশ্চিম রামপুরার ওয়াপদা রোড এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে একটি ছাত্র-জনতার মিছিল হয়। সেই মিছিলে অংশ নেন রমজান মিয়া নামে এক তরুণ। সকাল ১০টার দিকে মিছিল চলাকালে সংঘর্ষ বাঁধে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে রমজান মিয়া গুলিবিদ্ধ হন বুকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী বেটার লাইফ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। তবে সেখানে না গিয়ে তাকে নিকটবর্তী মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রিকশাযোগে নেওয়ার পথে রমজান মারা যান দুপুর ১২টার দিকে।
রমজান মিয়ার মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয় সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে। পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যার অভিযোগ ওঠে এবং ঘটনাটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক সহিংসতা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।
ঘটনার এক মাস পর, গত ২১ আগস্ট, নিহত রমজানের বাবা মো. লিটন মিয়া রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় নাম উল্লেখ না করলেও অভিযোগে ইঙ্গিত ছিল উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের। তদন্তে উঠে আসে, সেদিনের ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন কিছু আওয়ামী লীগপন্থী ছাত্র ও নেতাকর্মী। সেই সূত্র ধরেই সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও জুনাইদ আহমেদ পলককে আসামির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে তদন্ত সংস্থা।
বর্তমানে এই মামলাটি উচ্চমাত্রার গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে, এবং বিচার বিভাগ এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই মামলায় পলকের নাম যুক্ত হওয়া তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বড় আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে তিনি নিজে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবি করেছেন, “আমি নির্দোষ। জনগণই বিচার করবে কে সত্য আর কে মিথ্যা।”
বর্তমানে পলক কারাগারে থাকলেও, তার আইনজীবীরা জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন বলে জানা গেছে।