আলুর দাম কমে কৃষকদের মাথায় হাত! সিন্ডিকেটের দাপটে সর্বনাশের পথে উত্তরাঞ্চলের চাষিরা
উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় আলু উত্তোলনের কাজ পুরোদমে চলছে। তবে এবার চাষিরা চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। কারণ, শুরুতেই আলুর দাম এতটা কমেছে যে, কৃষকরা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না। মাঠেই মাত্র ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, গত এক দশকের মধ্যে আলুর এমন দরপতন দেখা যায়নি। হিমাগারে সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় এবং বাজারে ক্রেতার অভাবের কারণে তারা এখন দিশেহারা। অনেকেই দাবি করছেন, এর পেছনে কাজ করছে শক্তিশালী এক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যারা ইচ্ছাকৃতভাবে দাম কমিয়ে দিয়েছে।
হিমাগারে সংকট, কৃষকদের অসহায় আত্মসমর্পণ!
আলু ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের গোপন কারসাজির কারণে এবার সাধারণ কৃষকরা মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। কৃষকরা জানান, গত বছর প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার ভাড়া ছিল ৪ টাকা, এবার সেটা দ্বিগুণ হয়ে ৮ টাকায় পৌঁছেছে।
এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ কৃষকরা হিমাগারে বুকিং পেতে পারেননি। কারণ, হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রেখেছে। ফলে সাধারণ চাষিরা বাধ্য হচ্ছেন পানির দরে আলু বিক্রি করতে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার আলু চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন,
"এক বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনে আমার ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে মাত্র ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছি। এতে ১৫-২০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। এই ক্ষতি কীভাবে সামাল দেবো?"
আরেক চাষি মোহনপুরের মাইনুল ইসলাম জানান,
"আমরা কয়েক মাস ধরে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আগেভাগেই হিমাগার বুকিং নিয়ে আমাদের চরম বিপদে ফেলে দিয়েছে।"
হিমাগার মালিকদের বক্তব্য: দায় স্বীকার করলেন না কেউ!
হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান দাবি করেন,
"হিমাগারের ভাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে বাড়ানো হয়েছে। সিন্ডিকেটের কোনো ভূমিকা নেই। হিমাগারে বুকিং শুরু হয় আগেই, অনেক সময় এক বছর আগেই বুকিং হয়ে যায়।"
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোতালেব হোসেন জানান,
"আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর উৎপাদন এবার অনেক বেশি হয়েছে। কিন্তু সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বাজারে আলুর সরবরাহ বেশি হয়ে গেছে, যার ফলে দাম কমে গেছে।"
উত্তরাঞ্চলের আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণের ভয়াবহ চিত্র
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়,
- চলতি মৌসুমে ১৬ জেলায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে।
- প্রত্যাশিত উৎপাদন প্রায় ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার টন।
- উত্তরাঞ্চলের ২২১টি হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা মাত্র ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টন।
- বাকি ৭৫ লাখ টনের বেশি আলু গৃহস্থালি পর্যায়ে সংরক্ষণ বা বাজারে বিক্রি করা হয়।
অর্থাৎ, ৭৫% আলু সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই, যা কৃষকদের জন্য চরম দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			