close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

আইসিসির দেওয়া গ্রেফতার আতঙ্কে নেতানিয়াহু

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আন্তর্জাতিক আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানার ভয়ে ‘অপ্রতিরোধ্য’ নেতানিয়াহু পিছু হটলেন পোপের অভিষেক অনুষ্ঠান থেকেও! আইসিসির দৌলতে কোথাও নেই নিরাপত্তার গ্যারান্টি, তাই শেষমেশ বাতিল করতে হলো গুরুত্বপূর্ণ সফর!..

আইসিসির গ্রেফতারি আতঙ্কে নেতানিয়াহুর ‘পলায়ন’, বাতিল করলেন পোপের অভিষেক সফর

বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম বিতর্কিত মুখ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর গ্রেফতারি আতঙ্কে কার্যত পিছু হটলেন। দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরণের সামরিক ও কূটনৈতিক ক্ষমতার দাপটে বিশ্ব রাজনীতিতে একক আধিপত্য বজায় রাখলেও, আইসিসির এক ঘোষণায় যেন সেই ‘অপ্রতিরোধ্য’ নেতানিয়াহুর ভিতটাই কেঁপে উঠেছে।

২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর গাজা উপত্যকায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আইসিসি নেতানিয়াহু ও তৎকালীন ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। আদালত বলেছে, তারা যুদ্ধের পদ্ধতি হিসেবে ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধ, হত্যা, নিপীড়নসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ।

এই গ্রেফতারি পরোয়ানার ছায়া এতটাই গভীর হয়ে উঠেছে যে, রোববার ভ্যাটিকানে অনুষ্ঠিতব্য পোপ লিও চতুর্দশ-এর অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে নেতানিয়াহুকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে।

পেছনে সরে গেলেন নেতানিয়াহু – গ্রেফতারের ভয়ে বাতিল হল ভ্যাটিকান সফর

তাসনিম নিউজের বরাত দিয়ে ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম জানায়, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ইতালি ও ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পর্যালোচনায় বসেছিল। লক্ষ্য ছিল—এই সফরের সময় গ্রেফতারি পরোয়ানাটি কার্যকর হবে কি না, তার নিশ্চয়তা চাওয়া। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পক্ষ থেকে নেতানিয়াহুকে এমন কোনো নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। ফলে, নিরাপত্তার দোলাচলে পড়ে সফর বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন নেতানিয়াহু।

বিশ্বজুড়ে আইসিসি’র সদস্য দেশগুলোর সংখ্যা অনেক। এসব দেশের মাটিতে পা রাখলেই নেতানিয়াহুর গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। ভ্যাটিকান ও ইতালিও আইসিসির অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সফর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। আর সে কারণেই বহু প্রতীক্ষিত আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী।

আইসিসির নজরে নেতানিয়াহুর ভয়ঙ্কর অপরাধের খতিয়ান

আইসিসি তার আদেশে বলেছে, "ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা, পরিকল্পিতভাবে বেসামরিক মানুষকে হত্যা ও নিপীড়নের মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এই অপরাধে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ইয়োভ গ্যালান্ট যৌথভাবে সহ-অপরাধী হিসেবে দায়ী।"

বিশ্বজুড়ে ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানো আইসিসির এই পদক্ষেপ অনেকের কাছেই যুগান্তকারী মনে হলেও, আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল সমীকরণে এর বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

গাজায় রক্তপাত অব্যাহত, মৃত্যুপুরীতে রূপ নিচ্ছে উপত্যকা

অন্যদিকে, দখলদার ইসরাইলি বাহিনী গাজায় তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছে আরও ১২৫ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি। যার মধ্যে ৩৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে তথাকথিত ‘নিরাপদ এলাকা’ আল-মাওয়াসিরে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫৩,৩৩৯ ছাড়িয়েছে, আহত হয়েছেন ১,২১,০৩৪ জন। তবে ফিলিস্তিনের সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, প্রকৃত মৃত্যু সংখ্যা আরও বেশি—তারা দাবি করছে নিহতের সংখ্যা ৬১,৭০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ অবস্থায় পড়ে আছে, যারা হয়তো আর কখনো ফিরবেন না।

নেতানিয়াহুর সংকট বিশ্ব রাজনীতির নজরে

এই পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর পেছনে সরে যাওয়াটা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। একদিকে গাজার মতো ভয়াবহ মানবিক সংকট, অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা—এই দুইয়ের চাপে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে আগের মতো নির্ভয়ে ভ্রমণ করাটাও এখন আর সম্ভব হচ্ছে না।

বিশ্লেষকদের মতে, এটি এক নতুন যুগের সূচনা। যেখানে ক্ষমতার দম্ভ নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইনের কাছে জবাবদিহিতার বিষয়টি মুখ্য হয়ে উঠছে।

没有找到评论


News Card Generator