প্রায় পাঁচ মাস পর ভারতের সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার (২২ মার্চ) দেশটির সরকার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানায়। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়বে এবং দামও নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পেঁয়াজ রপ্তানিতে পাঁচ মাসের বিধিনিষেধ
২০২৩ সালের শেষ দিকে পেঁয়াজের ঘাটতি রোধ করতে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করে। এতে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ, রপ্তানির সরাসরি নিষেধাজ্ঞা এবং ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের মতো পদক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০২৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে এই শুল্ক কার্যকর হয়। মূলত, দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।
শুল্ক প্রত্যাহারের কারণ ও সরকারের ব্যাখ্যা
ভারত সরকার বলছে, কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা এবং দেশীয় বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্যই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটির সরকার মনে করছে, আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির সুযোগ বাড়লে কৃষকরা উপকৃত হবেন এবং বাজারেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর প্রভাব
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ, যা ভারতের অন্যতম প্রধান ক্রেতা, গত পাঁচ মাসে বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছে। দেশীয় উৎপাদনও বেড়েছে, যার ফলে ভারতের পেঁয়াজের ওপর নির্ভরতা কিছুটা কমেছে। কিন্তু এখন শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ আবারও বাড়তে পারে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে দামের কিছুটা স্থিতিশীলতা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতীয় কৃষকদের প্রতিক্রিয়া
ভারতের কৃষকরা দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কারণ, রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দেশটির কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। বাংলাদেশ, যেটি ভারতের অন্যতম প্রধান রপ্তানি গন্তব্য, আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় ভারতীয় কৃষকরা বিকল্প বাজারের সন্ধানে ছিলেন। এখন শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে তারা আবারও রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
পেঁয়াজের বাজারে সম্ভাব্য পরিবর্তন
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহারের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে। তবে এতে দাম একেবারে কমে যাবে না, বরং নির্দিষ্ট মাত্রায় স্থিতিশীলতা আসবে।
শেষ কথা
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির শুল্ক প্রত্যাহার দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। বাংলাদেশে উৎপাদন বাড়লেও ভারতীয় পেঁয়াজের প্রবাহ বাড়ার ফলে আমদানিকারক ও ভোক্তারা কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। তবে দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব কেমন হবে, তা নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ সরবরাহ ও চাহিদার ওপর।