২৪ ঘণ্টায় ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা: শেরপুর, নেত্রকোনা, সিলেট ও সুনামগঞ্জে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের চারটি জেলায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছে আবহাওয়াবিদরা। ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর ও নেত্রকোনা এবং সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার নদ-নদীগুলোর পানি ইতোমধ্যেই বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের মেঘালয় ও আসামে টানা ভারি বর্ষণ এবং দেশের অভ্যন্তরে গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত এই জলাবদ্ধতা এবং বন্যা পরিস্থিতিকে ঘনীভূত করেছে।
বিশেষত, শেরপুর জেলার চেল্লাখালী নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে নদীর পানি ৩৯ সেন্টিমিটার থেকে এই মাত্রায় পৌঁছানোয় স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
পাহাড়ি ঢলের আশঙ্কা, নদীসীমান্তে টহল জোরদার
আবহাওয়া ডট কম-এর প্রধান আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার থেকে আগামীকাল বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে শেরপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার নদ-নদীগুলোতে পাহাড়ি ঢলের সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল। মেঘালয় ও আসামে যেভাবে ভারি বৃষ্টি হচ্ছে, তা সোজাসুজি বাংলাদেশে ঢুকে এই চারটি জেলার নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
পলাশ বলেন, “আজ সকাল থেকে বজ্রবৃষ্টির যে প্রবণতা শুরু হয়েছে, তা আগামী ৬ ঘণ্টায় আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগজুড়ে বজ্রসহ ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে, যা রাতের মধ্যেই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।”
পাউবো’র সতর্কতা ও সর্বশেষ পরিস্থিতি
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, আজ সকাল ১০টার দিকে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত রাত ১০টায় যা ছিল ৩৯ সেন্টিমিটার। এই অস্বাভাবিক হারে পানি বাড়ার কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন—উজানের অতিরিক্ত বৃষ্টি ও দেশের অভ্যন্তরে টানা মুষলধারে বৃষ্টিপাত।
পাউবো আরও জানিয়েছে, আজ ভোর থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে জেলার নিচু এলাকা ও ফসলের মাঠগুলোতে পানি জমতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই কিছু জায়গায় বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
বিমানবাহিনীর রাডার চিত্রে উদ্বেগজনক পূর্বাভাস
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর রাডার চিত্র অনুযায়ী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে একের পর এক বজ্রবৃষ্টির মেঘ প্রবাহিত হচ্ছে। এটি প্রমাণ করছে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ আরও বলেন, “সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত এই তিন বিভাগের ওপর দিয়ে একাধিক বজ্রবৃষ্টির প্রবাহ অতিক্রম করবে বলে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে। এর প্রভাবে বিশেষ করে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলাতেও বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে।”
জনগণের জন্য সতর্কতা ও প্রস্তুতির আহ্বান
এমন প্রেক্ষাপটে স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা, শুকনা খাবার মজুদ এবং নদীর পাড়ে বসবাসরতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।