বাংলা নববর্ষ মানেই বর্ণিল আয়োজন, ঐতিহ্য, এবং শেকড়ের টান। পহেলা বৈশাখে ঢাকার রাজপথে চারুকলা অনুষদের আয়োজনে যে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়, সেটিই এখন আর 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নামে পরিচিত নয়। পরিবর্তন এসেছে এই ঐতিহাসিক নামেও।
৩৪ বছরের পুরনো 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' নামটি বদলে এবার নতুন নাম রাখা হয়েছে—‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ওসমান জামাল মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ।
তিনি জানান, “বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উপলক্ষে চারুকলা অনুষদ প্রতিবছরের মতো এবারও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করছে। এই শোভাযাত্রা আমাদের সংস্কৃতির অংশ, তবে সময় ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী কিছু পরিবর্তন জরুরি হয়ে উঠেছিল।”
কেন এ পরিবর্তন?
এই নাম পরিবর্তন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক মহল দাবি করে আসছিল, ‘মঙ্গল’ শব্দটি কিছু নির্দিষ্ট ধর্মীয় বা মতাদর্শগত বোঝাপড়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে। সাংবাদিকরা সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকেও এ বিষয়ে একাধিকবার প্রশ্ন করেন।
তিনি জানিয়ে আসছিলেন, বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আয়োজক কর্তৃপক্ষ—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই। অবশেষে এদিন সংবাদ সম্মেলনে এই পরিবর্তনের চূড়ান্ত ঘোষণা আসে।
কারা ছিলেন উপস্থিত?
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন:
-
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান
-
প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা
-
প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ
-
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী
-
চারুকলা অনুষদের ডিন ও বাংলা নববর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ
-
শোভাযাত্রা উপকমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক এ এ এম কাওসার হাসান
-
প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ
-
এবং নববর্ষ উদযাপন কমিটি ও উপকমিটির অন্যান্য সদস্যরা।
ঐতিহ্য রক্ষা নাকি আধুনিক অভিযোজন?
চারুকলা অনুষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “নাম পরিবর্তন হলেও শোভাযাত্রার মূল চরিত্রে কোনো পরিবর্তন আসছে না। বরং এতে আরও বেশি মানুষের অংশগ্রহণ এবং ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে পড়বে।”
অনেকে এই পরিবর্তনকে সময়োপযোগী বললেও, কেউ কেউ এটিকে সাংস্কৃতিক চেতনাকে খণ্ডিত করার চেষ্টা বলেও মন্তব্য করেছেন। তবু আয়োজকরা বলছেন, পরিবর্তনই সভ্যতার ধারাবাহিকতা।
বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রা শুধু একটি উৎসব নয়—এটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, যা ইউনেস্কো স্বীকৃতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মর্যাদাও পেয়েছে। নতুন নাম ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ কতটা জনপ্রিয়তা পাবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে এটুকু নিশ্চিত, এবারের পহেলা বৈশাখেও ঢাকার রাজপথ রঙিন হবে, মুখর হবে বাংলার আনন্দে।