জাতীয় রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে বিএনপির নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের এক ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে। অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি তাদের ‘অনিরপেক্ষ’ এবং ‘বিপজ্জনক’ বলে মন্তব্য করেছেন এবং অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার, ২৪ মে, সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে এই দাবি জানান ইশরাক। তিনি লেখেন, “তিনজন অনিরপেক্ষ এবং বিপজ্জনক উপদেষ্টাকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে অথবা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার জন্য একটি লিখিত মুচলেকা দিতে হবে।”
বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বিষয়ে তিনি আরও কঠোর ভাষায় মন্তব্য করেন। ইশরাক বলেন, “এটি কোনো আলোচনার বিষয় নয়। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনতে হবে যাতে করে মাতৃভূমি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে কোনো সম্ভাব্য হুমকির উৎস ও উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে জানা যায়।”
তবে আলোচিত এই পোস্টে ইশরাক কারা সেই তিনজন উপদেষ্টা তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি। তবু রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন উঠেছে, ইশরাকের ইঙ্গিতমূলক অভিযোগের তীর মূলত আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, মাহফুজ আলম এবং আরেকজন অনির্দিষ্ট উপদেষ্টার দিকেই।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পদে থেকেও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছেন বলে একাধিক রাজনৈতিক সূত্র থেকে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের ঝড় ওঠে।
তবে এনসিপি আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব অভিযোগ নাকচ করেছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “উল্লেখিত দুই উপদেষ্টা বর্তমানে আমাদের দলে সক্রিয় নন। তারা এনসিপির কোনও কার্যক্রমে সম্পৃক্ত নেই এবং সরকারি পদে থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন।”
এই অবস্থায় ইশরাক হোসেনের বক্তব্যকে রাজনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে, অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে নিয়ে প্রকাশ্যে এভাবে প্রশ্ন তোলা একটি নজিরবিহীন ঘটনা, যা সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক আরও জটিল করে তুলতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি সত্যিই উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন, তবে সেটি সরকারি নিরপেক্ষতার প্রশ্নে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে, সরকারপক্ষ এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এখন রাজনৈতিক মহলের চোখ রয়েছে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা এই দাবির বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া জানান—সেদিকেই।