close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

১৮ দফা রূপান্তরের রোডম্যাপ , প্রশাসন ঢেলে সাজাতে অন্তর্বর্তী সরকারের ঝড়ো উদ্যোগ!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকার মাঠে নেমেছে প্রশাসনিক রূপান্তরের ঝড়ো রোডম্যাপ নিয়ে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নে নেওয়া হয়েছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এবার বদলে যাবে অ..

জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবার প্রশাসন সংস্কারে এক বড় ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবকে ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ১৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সুপারিশগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা হয় এবং পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের রূপরেখা তৈরি হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বিগত মাসগুলোতে বিভিন্ন কমিশনের মাধ্যমে প্রস্তাব সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে জনপ্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মোট ১২১টি সুপারিশ সরকারকে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রশাসনিকভাবে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ১৮টি প্রস্তাব।

১৬ জুনের সভায় বিশেষভাবে আলোচিত হয় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৮টি প্রস্তাবের মধ্যে ৮টি যেগুলো অল্প সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব:

১. স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট প্রতিটি পেট্রোল পাম্পে

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২০ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব পেট্রোল ও সিএনজি পাম্পে নারী-পুরুষের জন্য আলাদা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছে। জেলা প্রশাসন এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন তদারকি করবে।

২. মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট হালনাগাদ ও ইন্টারঅ্যাক্টিভ করা

তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এক সপ্তাহের মধ্যে সব মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠক করে ওয়েবসাইটগুলোতে হালনাগাদ তথ্য ও নাগরিক মতামত নেওয়ার ব্যবস্থার রূপরেখা তৈরি করবে। ন্যাশনাল ডেটা গভর্নেন্স ইন্টারঅপারেবিলিটি কাজ দুই মাসে সম্পন্ন করতে হবে।

৩. ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠন

সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে ২ দিনের মধ্যে নীতিমালা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং এক মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে।

৪. কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিচালনায় এনজিওর ভূমিকা

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থার সাথে সভা করে কার্যকর মডেল চূড়ান্ত করবে।

৫. সরকারি দপ্তরে গণশুনানির রূপরেখা

জনগণের মতামত সরাসরি জানার লক্ষ্যে সব সরকারি সেবা সংস্থায় গণশুনানির ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক সপ্তাহে কৌশল নির্ধারণ করবে।

৬. আইনি কাঠামোর আধুনিকায়ন

তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ এর সংশোধনে নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে। দুই মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে সংশ্লিষ্ট আইন পর্যালোচনা করবে।

৭. পরিসংখ্যান ব্যুরোকে কমিশনে রূপান্তর

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান কমিশনে’ রূপান্তর করা হবে। এ কাজ চলমান সংস্কার কার্যক্রমের সাথে সমন্বয় করে বাস্তবায়ন করা হবে।

৮. ই-সেবা ও ডিজিটাল রূপান্তরের গতি

সরকারি সেবাকে এক প্ল্যাটফর্মে এনে নাগরিকদের কাছে সহজভাবে পৌঁছে দিতে ডিজিটাল রূপান্তরকে জোরদার করা হবে। তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ সেবাসমূহ একত্র করার কার্যক্রমে গতি আনবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। তার বক্তব্যে বলা হয়, প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজস্ব বাস্তবায়ন টিম গঠন করবে। এসব কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ)। পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও সহায়তা করবে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য নিয়মিত সভা ডাকা হবে।

বর্তমানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংশোধনসহ বৃহৎ সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে। তবে সরকার চায়, যেসব পরিবর্তন এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো দ্রুত কার্যকর করে জনগণ যেন বাস্তব সুফল পেতে শুরু করে।

প্রসঙ্গত, বিগত মাসগুলোতে ৫৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে ১,০৬১টি ছোট-বড় প্রশাসনিক সংস্কার প্রস্তাব জমা পড়েছে। এ থেকেই বাছাই করে দ্রুত বাস্তবায়নের মতো উদ্যোগগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

এই ১৮টি সুপারিশ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বদলে যেতে শুরু করবে দেশের প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসেবার চিত্র। অদূর ভবিষ্যতে জনগণের জীবনযাত্রায় এর প্রতিফলন স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার যে শুধু কথার ফুলঝুরি নয়, বাস্তবধর্মী পদক্ষেপেও বিশ্বাস করে—এই পরিকল্পনাগুলো তারই প্রমাণ।

کوئی تبصرہ نہیں ملا