রাজবাড়ীর কালুখালীর দয়রামপুর চরপাড়া গ্রামের সাবু মণ্ডল, পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রি, ১৬ বছর ধরে মাথার চুল কাটছেন না। কারণ, তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন—বিএনপি ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত চুল কাটবেন না। বয়স চল্লিশ পেরোলেও সেই প্রতিজ্ঞা ভাঙেননি। তাঁর জেদ যেন এক প্রতীকী প্রতিবাদ, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বিরল ঘটনা হয়ে উঠেছে।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের পর থেকেই সাবুর এই প্রতিজ্ঞার শুরু। তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এমনকি তাঁর বাবার সম্পত্তি বিক্রিতে কেনা একটি মাইক্রোবাসও লুট করা হয়েছে। সেই সময়ের ক্ষোভ আর জেদ থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, বিএনপি ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত মাথার চুল কাটবেন না।
স্থানীয়দের মতে, এত বছর ধরে নিজের প্রতিজ্ঞা ধরে রেখেছেন সাবু। পরিবারের অনুরোধ, পাড়া-প্রতিবেশীদের বোঝানো, এমনকি দলের নেতাদের কথাও তিনি উপেক্ষা করেছেন। তাঁর স্ত্রী বলেন, "অনেকবার অনুরোধ করেছি, কিন্তু চুল কাটার কথা বললেই রেগে যায়। বিএনপির প্রতি তাঁর ভালোবাসা অসীম।"
সাবু মণ্ডল নিজেও আত্মবিশ্বাসী যে সামনে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। তিনি বলেন, "তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন হবে। যেদিন সেটা হবে, সেদিনই মাথার চুল কাটব।"
সাবুর বড় ভাই হোসেন আলী মণ্ডল বলেন, "আমরা ৯ ভাই। পরিবারের সবাই বিএনপির সমর্থক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাদের পরিবারের ওপর প্রচণ্ড নির্যাতন নেমে এসেছিল। সাবু তখনই এই প্রতিজ্ঞা করেছিল।"
এলাকাবাসীর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও সাবুর এই ১৬ বছরের প্রতিজ্ঞা তাঁকে এলাকায় এক ব্যতিক্রমী চরিত্র হিসেবে তুলে ধরেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল জানাবে, সাবুর চুল কাটার দিন কি অবশেষে আসবে? সময়ই দেবে এর উত্তর।
কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি