যুদ্ধের ছায়ায় উপমহাদেশ: পাকিস্তানের পাশে আজারবাইজান, উদ্বিগ্ন বিশ্ব
পেহেলগামে সাম্প্রতিক হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক চরম উত্তেজনায় পরিণত হয়েছে। টানা দুই সপ্তাহ ধরে উত্তেজনার পারদ ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী, আর তার মধ্যেই পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। ভারত পাকিস্তানে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারতের ভেতরে। এই পাল্টাপাল্টি হামলায় উভয় পক্ষেই বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ভারতের একতরফা হামলাকে ‘বিনা প্রমাণের দোষারোপ’ বলে অভিহিত করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমর্থন পেতে শুরু করেছে পাকিস্তান। এই প্রেক্ষাপটেই এবার পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াল দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ আজারবাইজান।
শুক্রবার (৯ মে) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র ধরে এই সমর্থনের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এবং আজারবাইজানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেইহুন বায়রামভ টেলিফোনে আলাপ করেন, যেখানে বর্তমান আঞ্চলিক উত্তেজনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সেই আলোচনায় জেইহুন বায়রামভ ভারতীয় আগ্রাসনের নিন্দা জানান এবং পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করেন। নিরীহ মানুষের প্রাণহানিতে আজারবাইজানের পক্ষ থেকে পাকিস্তানি জনগণের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানানো হয়। দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখার এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার অঙ্গীকারও করা হয় এই আলাপে।
এদিকে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান ভারতের সাম্প্রতিক আচরণকে “বিপজ্জনক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে উল্লেখ করে বলেন, "ভারতের উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং যুদ্ধ উন্মাদনা শুধু উপমহাদেশ নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "এই অঞ্চল দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের বাসস্থান—এখানে যেকোনো বড় ধরনের সংঘর্ষ কেবল অঞ্চল নয়, বিশ্বকেও বিপদের মুখে ফেলতে পারে। ভারতের বেপরোয়া আচরণ সেই সংকটকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।"
আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি এখন উপমহাদেশে
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে ভারতের অভ্যন্তরেও এই হামলা ও উত্তেজনাকে ঘিরে বিভক্ত মতামত সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, কূটনৈতিক আলোচনা ছাড়া এই সংঘাতের নিরসন অসম্ভব।
আজারবাইজানের সমর্থন পাকিস্তানের জন্য এক তাৎপর্যপূর্ণ কূটনৈতিক জয়। কারণ এই সমর্থন শুধু আঞ্চলিক নয়, বরং ইসলামি দুনিয়াতেও পাকিস্তানের অবস্থানকে শক্তিশালী করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত যদি তার আগ্রাসী নীতি থেকে না সরে আসে, তাহলে এই উত্তেজনা আরও বড় আকার নিতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এমন এক মোড়ে পৌঁছেছে, যেখানে সামান্য উসকানিও বৃহৎ যুদ্ধের সূচনা ঘটাতে পারে। আজারবাইজানের প্রকাশ্য সমর্থন এই উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করতে পারে।
বিশ্ব এখন উদ্বেগভরেই তাকিয়ে আছে এই দুই প্রতিবেশী দেশের দিকে—শান্তির পথে তারা এগোবে, নাকি যুদ্ধের পথে এগিয়ে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে গোটা উপমহাদেশকে?