উপদেষ্টাদের পদত্যাগ ঘিরে উত্তাল রাজনীতি: অস্থিরতার দ্বারপ্রান্তে কি অন্তর্বর্তী সরকার?
দেশের রাজনীতিতে এক নতুন মোড় নিয়েছে বিএনপি ও এনসিপির পাল্টাপাল্টি অবস্থান। সম্প্রতি বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে যে আন্দোলনের সূচনা, সেটি এখন রূপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবিতে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও বেশি অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
পদত্যাগ দাবির সূত্রপাত এবং বিএনপির অবস্থান
বিএনপি নেতাকর্মীরা কয়েকদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এর পদত্যাগের। তাদের অভিযোগ—এই দুই উপদেষ্টা সরকার পতনের জুলাই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এবং বর্তমানে সরকারে থেকে প্রভাব বিস্তার করছেন।
বিএনপির দাবি, এই দুই উপদেষ্টার উপস্থিতি সরকারের নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দলটির নেতা ইশরাক হোসেন এক বিবৃতিতে বলেন, “আমাদের দাবি মানা না হলে আন্দোলন আবারও জোরদার করা হবে। শিগগিরই ৪৮ ঘণ্টার স্থগিত কর্মসূচির পর পরবর্তী ধাপে যাওয়া হবে।”
পাল্টা চাপ ও এনসিপির হুঁশিয়ারি
বিএনপির দাবির পাল্টা জবাব দিতে দেরি করেনি এনসিপি। দলটির এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, সরকারের আরও তিনজন উপদেষ্টা আসলে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ হিসেবে কাজ করছেন। তারা হলেন—আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ এবং অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এনসিপির হুঁশিয়ারি, "যদি সরকার সংস্কার সুপারিশ বাস্তবায়ন না করে, তাহলে এই তিন উপদেষ্টাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।"
এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে উপদেষ্টা পরিষদের ভিতরে দ্বন্দ্ব এবং বিভাজনের আশঙ্কা বাড়ছে।
উপদেষ্টা পরিষদের বাস্তব অবস্থা
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টাসহ ২৩ জন উপদেষ্টা রয়েছেন। তাদের মধ্য থেকেই দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি দাবি উঠেছে। যাদের পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে, তারা সবাই গুরুত্বপূর্ণ পোর্টফোলিওর দায়িত্বে রয়েছেন। তাই এই সংকট শুধু রাজনৈতিক নয়, প্রশাসনিক কার্যক্রমেও বড় ধাক্কা দিতে পারে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে নিয়েও বিতর্ক
বিএনপি সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানসহ কয়েকজন উপদেষ্টাকে “বিতর্কিত” উল্লেখ করে অব্যাহতির দাবি জানায়। তারা বলেন, “দেশের বর্তমান অস্থিরতায় এসব উপদেষ্টাদের ভূমিকা সন্দেহজনক, তারা সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ করছেন।”
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পদত্যাগ কেন্দ্রিক কৌশল একধরনের চাপের রাজনীতি। এটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আস্থা দুর্বল করছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সানজিদা রহমান বলেন, “পদত্যাগের দাবিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হলে সরকার তার মূল লক্ষ্য—সংকট নিরসন ও নিরপেক্ষতা—থেকে বিচ্যুত হতে পারে। এতে করে একটি অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যা দেশের উন্নয়নকেও ব্যাহত করতে পারে।”
শেষ কথা
বিএনপি ও এনসিপির এই পাল্টাপাল্টি দাবিতে স্পষ্ট যে, অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যন্তরে অনৈক্য সৃষ্টি হচ্ছে। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সরকারের কার্যক্রমেও। প্রশ্ন উঠেছে—এই পদত্যাগের খেলায় কে জিতবে আর কে হারবে? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন—জনগণের স্বার্থ কীভাবে সুরক্ষিত থাকবে?