ইশরাককে শপথ না করালে অচল ঢাকা, উপদেষ্টা আসিফকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশ সত্ত্বেও ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব না দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ঢাকাবাসী। টানা তিনদিন ধরে নগর ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। শনিবার (১৭ মে) সকাল ১০টায় হাজার হাজার মানুষ নগর ভবনের সামনে জড়ো হয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিক্ষোভকারীদের মতে, আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে যারা ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণ বিলম্বিত করছেন, তারা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে নগর ভবনের সামনে এক প্রতিবাদী সমাবেশে সাবেক সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান স্পষ্ট ঘোষণা দেন— “স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তার সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এখন থেকে নগর ভবনে অবাঞ্ছিত।” সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, “তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।”
বিক্ষোভের ঢেউ সচিবালয় পর্যন্ত
নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভের পর একটি বিশাল মিছিল সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা হয়। সচিবালয় হয়ে প্রেস ক্লাব ঘুরে মিছিলটি আবার নগর ভবনে ফিরে আসে। বৃহস্পতিবার থেকেই এই আন্দোলন ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। গতকাল দ্বিতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচির সময় নগর ভবনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও অংশ নেন।
তারা সকলে মিলে নগর ভবনের নিচতলায় স্টেজ করে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্মসূচিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক কর্মী এবং সচেতন নাগরিকরাও একত্রিত হয়েছেন।
‘আইনের শাসন কোথায়?’ — প্রশ্ন নগরবাসীর
বিক্ষোভকারীদের দাবি, আদালতের রায় এবং নির্বাচন কমিশনের গেজেট অনুযায়ী ইশরাক হোসেন-ই এখন বৈধ মেয়র। অথচ এখনও তাকে শপথ করানো হয়নি। এ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন— “আইনের শাসন কি শুধু কাগজে-কলমে থাকবে? আদালতের নির্দেশ অমান্য করার সাহস কোথা থেকে আসে?”
তারা বলেন, “আমরা চাই একটি দুর্নীতিমুক্ত, মশামুক্ত, পরিচ্ছন্ন ঢাকা। সেই লক্ষ্য পূরণে ইশরাক হোসেনই সঠিক ব্যক্তি। তার শপথ অনুষ্ঠান বিলম্ব করা মানেই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা।”
গেজেটের গড়িমসি, আইনি জটিলতা নাকি প্রশাসনিক বাধা?
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র হিসেবে রায় দেন। ঈদের পর ১৬ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে আদালত নির্বাচন কমিশনকে ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন।
২২ এপ্রিল কমিশন গেজেট প্রকাশের আগে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায়। এরপর মৌখিক অনুমতি পেয়ে ২৭ এপ্রিল রাত ৯টায় গেজেট প্রকাশ করা হয়। পরদিন ২৮ এপ্রিল গেজেট স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু এরপর ওই গেজেট আবার নির্বাচন কমিশনে ফেরত পাঠানো হয় আপিলের সুপারিশসহ। নির্বাচন কমিশন জানায় তারা আপিল করবে না।
কিন্তু তার পরেও প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনও শপথ গ্রহণের কোনও উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে।
নতুন কর্মসূচি ঘোষণা, পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত
সমাবেশে ঘোষণা দেওয়া হয়, আগামীকাল (১৮ মে) থেকে আন্দোলনের পরিধি আরও বাড়ানো হবে। নগর ভবনের প্রতিটি গেট তালাবদ্ধ থাকবে এবং ঢাকাবাসী প্রয়োজনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।
এছাড়া ঢাকাবাসীর এই অবস্থান কর্মসূচিকে দেশের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।