close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আসন সীমানা নির্ধারণে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণে ঐকমত্যে পৌঁছেছে রাজনৈতিক দলগুলো। বড় ধরনের সাংবিধানিক পরিবর্তন ও নির্বাচনী সংস্কারে একমত সব পক্ষ। আলোচনায় এসেছে সময়সীমা, কাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়া।..

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী অগ্রগতির পথে হাঁটছে দেশ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ—এই দুই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে দেশের সব রাজনৈতিক দল। এই ঐকমত্য ঘোষিত হয়েছে বুধবার (২ জুলাই) ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির দোয়েল হলে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিনের বৈঠকে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে বলেন, “আলোচনায় নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের চলমান প্রক্রিয়া ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

আলোচনায় অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ। অধ্যাপক রীয়াজ জানান, প্রতি আদমশুমারির পরে অনধিক ১০ বছরের মধ্যে আসন পুনর্নির্ধারণ করতে সাংবিধানিক সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা উঠে এসেছে। এ বিষয়ে একটি সাংবিধানিক কমিটি গঠনের ব্যাপারে সর্বদলীয় ঐকমত্য হয়েছে।

তিনি বলেন, “সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদে একটি নতুন ধারা সংযোজন করে আসন নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছে। এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সীমানা পুনর্নির্ধারণ বাধ্যতামূলক হবে।”

সেইসঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে ২০২১ সালের “জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমানা নির্ধারণ আইন”, যা ২০২৫ সালে সংশোধিত হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে গঠিতব্য কমিটির কার্যপরিধি ও সীমারেখা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হবে বলে জানানো হয়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, “সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অভিন্ন মত পোষণ করেছে। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন, মেয়াদ ও কাঠামো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। দুটি আলাদা সুপারিশ উঠে এসেছে—একটি নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে, যারা ১২০ দিনের তত্ত্বাবধায়ক মেয়াদের পক্ষে; অপরটি সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে, যারা ৯০ দিনের প্রস্তাব দিয়েছে।

এছাড়া আলোচনায় এসেছে, প্রধান উপদেষ্টা কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে—এটা হবে রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে নাকি নিরপেক্ষ পদ্ধতির মাধ্যমে—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

অধ্যাপক রীয়াজ স্পষ্ট করে জানান, “দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই সমাধানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো এখন আর মুখোমুখি নয়, বরং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো—এই দুটি ইস্যুতে যে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে তা ইতিহাসে প্রথম।”

তিনি আরও বলেন, “এই আলোচনার ফলাফলকে আইনি কাঠামোতে রূপান্তর করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ঐকমত্য কার্যকর করতে হলে সংসদীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংশোধনী পাশ করতে হবে।

এই বৈঠকের ফলাফল নিঃসন্দেহে দেশের সাধারণ নাগরিকদের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক ও আশাব্যঞ্জক সংবাদ। বছরের পর বছর ধরে নির্বাচনকে ঘিরে যে সংঘাত ও অবিশ্বাস চলেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুলে যাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঐকমত্য বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় এক নতুন যুগের সূচনা হবে, যা দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা রাখবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচনী আসন পুনর্নির্ধারণ নিয়ে দেশের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যমতে পৌঁছেছে—এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বড় মাইলফলক। আইন, সংবিধান ও নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দেশের গণতন্ত্র হবে আরও শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য।

Комментариев нет