রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তিসহ ন্যায্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায় ফের রাজপথে অবস্থান নেন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পে নিয়োজিত নারী কর্মীরা। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’র উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। তবে কাকরাইল মসজিদ সড়কে পৌঁছানোর পরই তাদের পথরোধ করে পুলিশ। এতে বাধা পেয়ে সড়কের ওপর বসেই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
উল্লেখ্য, ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের অধীনে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মরত রয়েছেন কয়েক হাজার নারী। তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পে কাজ করলেও চাকরি স্থায়ীকরণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এর প্রতিবাদে এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২৮ মে থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চার দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন তারা।
দাবি ছিল— সকল কর্মীকে সরকারি রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত করে স্থায়ী নিয়োগ প্রদান, বেতন ভাতার নিরবিচারে পরিশোধ, প্রকল্পের আওতা বাড়িয়ে তা দীর্ঘমেয়াদী করা এবং সব কর্মীর চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তারা এখন তাদের দাবি দুই দফায় সীমিত করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম দুটি দাবি হলো—
১. সকল কর্মীকে সমগ্রেডে পদ সৃষ্টি করে দ্রুত রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা
২. কাটা পড়া বেতন ও ভাতা দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা।
টানা অনশনে অংশ নেওয়া একাধিক নারী কর্মী শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থান কর্মসূচিরত একজন নারী বলেন, “আমরা বছরের পর বছর সেবা দিয়েছি। আজ সেই শ্রমের স্বীকৃতি না পেয়ে রাজপথে বসেছি। রাজস্ব খাতে স্থানান্তর না হলে ঘরে ফিরবো না।”
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তথ্য আপারা শুধু একজন কর্মী নন, তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের ডিজিটাল তথ্যসেবায় যুক্ত করে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। অথচ তারা আজ অবহেলিত, তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। অনশনরত কর্মীদের একজন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমরা মা, বোন, স্ত্রী, আবার কর্মী। এখন আমরা মানুষ হিসেবেও গুরুত্ব পাচ্ছি না। আমাদের দাবি পূরণ না হলে মৃত্যুর মধ্য দিয়েই আমাদের অবস্থান শেষ হবে।”
এদিকে পুলিশি বাধা ও অনশন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রকল্পের একজন সমন্বয়ক জানান, তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে বারবার আবেদন করেও কোনো স্থায়ী সমাধান পাননি। বর্তমানে বেতনের যে অংশ কাটা হয়েছে সেটাও তারা পায়নি, যার কারণে কর্মীদের অনেকেই আর্থিক সংকটে রয়েছেন।
সরকারি কোনো প্রতিনিধি এখনও তথ্য আপাদের দাবির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দেননি বলে জানা গেছে। ফলে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথে থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।একটি দেশের উন্নয়নে প্রান্তিক নারীদের ডিজিটাল সংযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই দায়িত্ব পালন করা নারীরা যদি রাজপথে অনশন করতে বাধ্য হন, তাহলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য লজ্জার বিষয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবসম্মত সমাধান না এলে এ আন্দোলন আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।