বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও উত্তেজনার ঝড়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন— ইরান তাদের পরমাণু কার্যক্রমের সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিহ্নিত করেছে এবং তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।
ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির বরাতে জানা যায়, ফক্স নিউজকে দেওয়া এক এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু এসব বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি সরাসরি বলেন, "তারা (ইরান) তাকে হত্যা করতে চায়। ট্রাম্প তাদের চোখে শত্রু নম্বর ওয়ান।"
নেতানিয়াহু বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কখনোই নরম কূটনীতির পথে হাঁটেননি। বরং তিনি স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তিকে বাতিল করেন, যেটিকে নেতানিয়াহু ‘ভুয়া চুক্তি’ বলে আখ্যায়িত করেন। শুধু তাই নয়, ট্রাম্পের নির্দেশেই মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন ইরানের ইসলামি রেভোলিউশনারি গার্ডের প্রভাবশালী জেনারেল কাসেম সোলাইমানি।
নেতানিয়াহুর ভাষায়, “ট্রাম্প স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন— তোমরা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না, পারমাণবিক বোমা পাবে না।” এই কথাগুলোকেই ইরান তাদের বিরুদ্ধে ঘোষণা হিসেবে নিয়েছে।
শুধু ট্রাম্প নয়— নিজেকেও হত্যাচেষ্টার শিকার দাবি করেছেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, “আমার ঘরের জানালায় একবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল। ইরান আমার দিকেও হামলা চালিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমি ট্রাম্পের জুনিয়র পার্টনার— আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি ইরানের পরমাণু উচ্চাকাঙ্ক্ষা ঠেকাতে।”
এই বক্তব্য শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যেও আলোচনার ঝড় তুলেছে।
নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “ইসরায়েল এখন একটি দ্বৈত অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি।”
প্রথমত, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে পারমাণবিক বোমা বানাতে চলেছে। তারা প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার হুমকি দিচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, ইরান তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন এমন পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে, যা দিয়ে আগামী তিন বছরে প্রায় ১০ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরের দিকে ছোঁড়া সম্ভব হবে।
নেতানিয়াহু বলেন, “এই মাত্রার হুমকি কোনো দেশ সহ্য করতে পারে না— বিশেষ করে আমাদের মতো একটি ছোট রাষ্ট্র।
নেতানিয়াহুর এই বক্তব্য সামনে আসতেই বিশ্বজুড়ে চাপে পড়েছে কূটনৈতিক মহল। ট্রাম্পকে হত্যার পরিকল্পনা, ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি, এবং ইরানের পরমাণু অগ্রযাত্রা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে— সামনে কি আরও ভয়ঙ্কর সংঘাত অপেক্ষা করছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বক্তব্য ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ককে নতুন উত্তেজনার দিকে ঠেলে দিতে পারে। আর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ঘিরে এই অভিযোগ মার্কিন রাজনীতিতেও ঝড় তুলতে পারে।
নেতানিয়াহুর দাবি সত্য হলে, শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়— গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নতুন এক সংকটে পড়তে পারে। ট্রাম্পের মতো একজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা শুধু রাজনৈতিক নয়, এটি একটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে রূপ নিতে পারে।



















