পাকিস্তানের সামরিক প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার হোয়াইট হাউজে হওয়া সাম্প্রতিক বৈঠকটি দেশটিতে এক ধরনের কূটনৈতিক ‘জয়’ হিসেবে তুলে ধরার পরিকল্পনা ছিল ইসলামাবাদের। বাইডেন প্রশাসনের সময় যেখানে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত হোয়াইট হাউজ থেকে একটি ফোন কলও পাননি, সেখানে হঠাৎই এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক – সন্দেহের চোখে না তাকিয়ে উপায় কী?
তবে বাস্তবতা হলো, এই ‘কূটনৈতিক সাফল্য’ আদৌ কতটা স্বচ্ছ এবং টেকসই, তা নিয়ে উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। বৈঠকটি এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন ট্রাম্প আবারও আন্তর্জাতিক রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে এবং ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধ নিয়ে জোর প্রস্তুতিতে আছেন। অন্যদিকে, পাকিস্তান শুরু থেকেই ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপে নিজেদের অনাস্থা প্রকাশ করে এসেছে।
ট্রাম্প ইসরায়েলকে সরাসরি সমর্থন জানিয়ে আসছেন। সেই ইসরায়েলের সাম্প্রতিক গাজায় হামলাকে পাকিস্তান সরকার প্রকাশ্যে ‘বর্বরোচিত’ বলে অভিহিত করেছে। অথচ এই বিপরীতমুখী অবস্থান সত্ত্বেও, ইসলামাবাদ এবং ওয়াশিংটনের সম্পর্ক হঠাৎ করে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
তার ওপর পাকিস্তান ইরানে আটকে পড়া প্রায় তিন হাজার নাগরিককে উদ্ধার করতে বড় পরিসরে একটি অপারেশন চালাচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, পাকিস্তান এই মুহূর্তে ইরানকেও চরমভাবে দরকার, আবার ট্রাম্পের কৌশলগত বন্ধুত্বও হাতছাড়া করতে চায় না।
এই দ্বিমুখী অবস্থান কতটা টিকবে, তা নিয়েও বিশ্লেষকদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে।
বৈঠকটি দুই ঘণ্টাব্যাপী হলেও একটিও ছবি কিংবা ভিডিও প্রকাশ করা হয়নি— যা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইরান সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আলোচনা কীভাবে, কতটা গভীরে এবং কী সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছে— এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে সরকার।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৈনিক ব্রিফিংয়ে আজ কিছু প্রশ্ন ঘুরে ফিরে এসেছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল, “ওই কক্ষে কি কোনো বেসামরিক নেতা ছিলেন?” আরেকটি প্রশ্ন ছিল আরও কৌতূহলোদ্দীপক: “তাহলে কি আমরা আসলেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র?”
মুখপাত্র হালকা হাসি দিয়ে জবাব দেন, “পাকিস্তান নিঃসন্দেহে একটি গণতান্ত্রিক দেশ।” এরপর তিনি সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন, এই বৈঠক নিয়ে বিস্তারিত জানতে সরাসরি সেনাবাহিনীর দফতরে যোগাযোগ করতে।
বৈঠকের সময় ও প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পাকিস্তান এখন এক দোদুল্যমান অবস্থানে দাঁড়িয়ে— একদিকে মার্কিন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, আরেকদিকে প্রতিবেশী ও ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইরান।
অনেক কূটনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই বৈঠক পাকিস্তানের জন্য হয়তো সাময়িক কূটনৈতিক সুবিধা এনে দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর কূটনৈতিক ভারসাম্য কতটা বিপর্যস্ত করবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			