ট্রাম্পের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ খামেনি: “এটি আমেরিকান জাতির জন্য লজ্জাজনক”
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি ট্রাম্পের মন্তব্যকে আমেরিকান জাতির জন্য অপমানজনক ও লজ্জাজনক বলে আখ্যা দেন। শনিবার (১৭ মে), ইরানজুড়ে শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধনীতি, গাজা পরিস্থিতি এবং মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার ভূমিকার ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন।
আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেন, “এই অঞ্চল সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা বলেছেন, তা শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত মানসিকতা নয়, বরং পুরো আমেরিকান জাতির জন্যই এটি অপমানজনক। একজন বিশ্বনেতা যেভাবে অন্য জাতিগুলোর সম্মান ও নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তা সত্যিই দুঃখজনক।”
তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি শান্তি স্থাপনের জন্য তার ক্ষমতা ব্যবহার করতে চান, অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তারা গাজার শিশুদের হত্যা, হাসপাতাল ধ্বংস এবং নিরীহ মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস করার জন্যই ক্ষমতা ব্যবহার করছে। যুক্তরাষ্ট্র শান্তি নয়, বরং রক্তপাত ছড়ানোর নীতি নিয়েছে।”
যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ উসকে দিচ্ছে
খামেনি তাঁর বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধকামী নীতির বিরুদ্ধে সরব হন। তিনি বলেন, “ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন শুধুই যুদ্ধ উসকে দেয়, তারা যেখানেই নিজেদের স্বার্থ দেখে, সেখানেই সংঘর্ষ তৈরি করে। এই শক্তিকে তারা শান্তির জন্য নয়, নিজেদের ভাড়াটে গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা এবং দমন-পীড়নের জন্য ব্যবহার করে।”
তিনি উল্লেখ করেন, “ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এই অঞ্চলের জন্য মারাত্মক হুমকি। গাজায় বোমা বর্ষণ, লেবাননে হামলা, এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি দেশে সামরিক হস্তক্ষেপের নেপথ্যে আমেরিকারই হাত।”
মডেল ব্যর্থ, আমেরিকা ছাড়া টিকতে পারবে না—এ ধোঁকাবাজি
আয়াতুল্লাহ খামেনি ট্রাম্পের দেওয়া মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই অঞ্চলের কিছু আরব দেশ আমেরিকার সহায়তা ছাড়া দশ দিনও টিকতে পারবে না। এটি নিছক রাজনৈতিক দম্ভ এবং অপমান। এটি আসলে আমেরিকার আধিপত্যবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। এই মডেল পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ইতিহাস দেখিয়েছে, জাতিগুলো দখলদার ও দমনমূলক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে জানে।”
তিনি যুক্ত করেন, “এই মডেলও ধ্বংস হবে। এই অঞ্চল থেকে আমেরিকান উপস্থিতি শেষ পর্যন্ত বিদায় নেবে। জনগণের সংগ্রাম এবং ঐক্যই তাদের তাড়িয়ে ছাড়বে।”
ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থা একটি মারাত্মক টিউমার
খামেনি বলেন, “ইসরায়েল শুধু এই অঞ্চলের জন্য নয়, গোটা মানবতার জন্য এক বিপজ্জনক ক্যান্সার। এই শাসনব্যবস্থা যুদ্ধ, দুর্নীতি এবং বিশৃঙ্খলার উৎস। এই টিউমার উপড়ে ফেলতেই হবে। এই ক্যান্সার যতদিন থাকবে, ততদিন নিরাপত্তা সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “গাজায় শিশুদের ওপর বোমা বর্ষণ, হাসপাতাল ধ্বংস, বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া কোনো সভ্য দেশের আচরণ হতে পারে না। যেই রাষ্ট্র এসব কর্মকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষকতা করে, তাদের নৈতিকতা এবং মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবশ্যক।”
শিক্ষাই জাতির মূল ভিত্তি
ভাষণের শেষভাগে আয়াতুল্লাহ খামেনি শিক্ষার গুরুত্বের ওপর বিশেষভাবে জোর দেন। তিনি বলেন, “আমি বারবার বলেছি—শিক্ষার খাতে আমরা যা ব্যয় করি, তা প্রকৃতপক্ষে বিনিয়োগ। এ থেকে জাতি বহু দিক থেকে লাভবান হবে। আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত যে এই সময়ে প্রশাসন বিশেষ করে সম্মানিত রাষ্ট্রপতি শিক্ষা খাতে গুরুত্ব দিচ্ছেন।”
তিনি বলেন, “শিক্ষা আমাদের ভবিষ্যৎ তৈরি করে। শক্তিশালী জাতি গঠনের জন্য শুধু অস্ত্র নয়, জ্ঞান এবং নৈতিকতারও প্রয়োজন। ইসলামি প্রজাতন্ত্র তাই প্রতিদিন নিজেকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলছে