একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতার অবস্থান প্রকাশ্যে জানিয়ে হুমকি দিচ্ছেন, অন্যদিকে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘অবশ্যই প্রতিশোধ’ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে গোটা অঞ্চলে নতুন করে যুদ্ধের বারুদের গন্ধ ছড়িয়ে দিয়েছেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকির সুরে বলেন
আমরা জানি তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি সহজ লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু আমরা এখনই তাঁকে হত্যা করবো না— অন্তত এখনও না।”
এর কিছুক্ষণ পর আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন
ইরানের আকাশসীমা এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে।
আর এরপরই তিনি তৃতীয় পোস্টে আরও সরাসরি বার্তা দেন—
Unconditional Surrender!” (নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ)
এই টানা পোস্টগুলোর মাধ্যমে ট্রাম্প কার্যত যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা না দিলেও, ইরানকে চূড়ান্ত রণপ্রস্তুতির হুমকি দেন।
তবে এসব হুমকিকে আমলে না নিয়েই পাল্টা জবাব দেন ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি।
তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে লেখেন
আমাদের সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দিতে হবে। জায়নবাদীদের কোনো দয়া নয়।”
তিনি আরও বলেন —
যুদ্ধ তো শুরু হয়েই গেছে। আমাদের আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। আমরা প্রতিশোধ নেবই।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে খামেনি শুধু ট্রাম্প নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকেই সরাসরি ‘শত্রু শিবির’ বলে চিহ্নিত করলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, খামেনির এমন বিবৃতি ইঙ্গিত দিচ্ছে— ইরান ভবিষ্যৎ প্রতিশোধের পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত করেছে। বিশেষ করে গাজায় ইসরায়েলের হামলা এবং সিরিয়ায় ইরানি ঘাঁটিতে আঘাতের পরপরই এই বার্তাগুলো এসেছে। আর ট্রাম্পের মত এক সাবেক প্রেসিডেন্ট যখন হুমকি দিয়ে বলেন, “আমরা জানি সে কোথায় লুকিয়ে আছে,” তখন এর রাজনৈতিক ও সামরিক তাৎপর্য গভীরতর হয়।
ইরানের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রতিশোধমূলক হামলা 'রাষ্ট্রীয় অধিকার'— এটি আত্মরক্ষার অংশ।
কূটনীতিকরা বলছেন, ট্রাম্পের এসব বার্তা শুধু ইরান নয়, বরং পুরো মুসলিম বিশ্বকেই উত্তপ্ত করে তুলছে। অন্যদিকে, খামেনির বক্তব্য শুধুমাত্র প্রতিরোধের ডাক নয়, এটি ভবিষ্যতের এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধের পূর্বাভাস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি শুধুমাত্র ‘শব্দযুদ্ধ’ না-ও হতে পারে। কারণ দুই পক্ষই এখন সরাসরি ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ে হুমকির ভাষা ব্যবহার করছে। এর মানে হলো, পরবর্তী ধাপে হয়ত আসলেই ‘মিসাইল’ বা ‘ড্রোন’ কথা বলবে।
বিশ্ব যখন শান্তির পথে হাঁটার কথা ভাবছে, তখন ইরান-যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল ত্রিভুজের এই উত্তেজনা গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ট্রাম্পের 'টার্গেট কিলিং' হুমকি এবং খামেনির 'যুদ্ধ শুরু' বার্তা— দুটিই যেন একটি মহাযুদ্ধের সাইরেন হয়ে উঠেছে।