close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ট্রা ম্পে র ই রা ন আ ক্র মণ কি বিশ্বযুদ্ধের সূচনা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
শান্তির বার্তা দিয়ে হোয়াইট হাউসে ফেরা ট্রাম্প, ইরানে হামলা চালিয়ে পৃথিবীকে টেনে এনেছেন যুদ্ধের কিনারায়। এবার কি মধ্যপ্রাচ্য ঘিরে শুরু হতে যাচ্ছে ভয়াবহ বৈশ্বিক সংঘাত?..

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এবং আবারও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে জানুয়ারিতে ফিরে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন— এবার তিনি শান্তির বার্তাবাহক হবেন। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্ত পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে ঠেলে দিয়েছে সম্ভাব্য এক ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে, যার পরিণতি হতে পারে বৈশ্বিক অস্থিরতা।

ট্রাম্প সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সফল হামলা চালিয়েছে। এই ঘোষণার দুই ঘণ্টার মাথায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে তিনি এই অভিযানকে 'অসাধারণ সাফল্য' বলে দাবি করেন এবং বলেন, এটি একটি স্থায়ী শান্তির পথ খুলে দেবে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কিছু।

যখন ট্রাম্প ঘোষণা করলেন যে এই আক্রমণ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র থেকে বিরত রাখবে, তখনই অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক সন্দেহ প্রকাশ করেন— এটি কি আসলেই শান্তির জন্য, নাকি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার আরেকটি 'বড় জুয়া'?

হোয়াইট হাউসে তাঁর পাশে তখন ছিলেন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। তাঁদের উপস্থিতি ছিল একটি পরিষ্কার বার্তা— আমেরিকা এখন একত্র এবং প্রস্তুত।

ট্রাম্প বলেন, ‘‘অনেক টার্গেট এখনও বাকি আছে। আমেরিকা গতি, নির্ভুলতা ও দক্ষতার সঙ্গে এগুলোতেও আঘাত হানবে।’’

কিন্তু এই সিদ্ধান্তেই রয়েছে বিপদের ইঙ্গিত। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, এই আক্রমণ মধ্যপ্রাচ্যকে একটি ‘নিয়ন্ত্রণহীন বিশৃঙ্খলার চক্রে’ ফেলতে পারে। ইতোমধ্যেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হুঁশিয়ার করেছেন— আমেরিকা এর জবাব পাবে।

মাত্র কয়েকদিন আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, ইরানকে সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হবে দুই সপ্তাহ সময়। কিন্তু সেই সময়সীমা কমে গেল মাত্র দুই দিনে। শনিবার রাতে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ‘আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি’। তাহলে কি দুই সপ্তাহের আলাপ-আলোচনা ছিল কেবল একটা ছলনা?

সম্ভবত ট্রাম্প একটি কূটনৈতিক নাটক সাজাতে চেয়েছিলেন, যেন ইরান বুঝতে না পারে হামলার প্রস্তুতি কখন শুরু হয়েছে। অথবা, তাঁর বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বে গোপন শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে এবং আক্রমণ হয়ে গেছে অনিবার্য।

মার্কিন হামলার পরে ইরান এখন এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে। বিশেষ করে যখন ট্রাম্পের হামলার লক্ষ্য ছিল ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা— যেটি ইরানের সবচেয়ে গোপন এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত।

ট্রাম্প আশা করছেন, এই হামলা ইরানকে আলোচনার টেবিলে টেনে আনবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো— যারা ইসরায়েলের হামলার সময় কথা বলেনি, তারা আমেরিকার বোমা পড়ার সময় আরও কঠোর হবে, এমনটাই স্বাভাবিক।

যদি ট্রাম্পের দাবি করা মতো এই হামলা একবারের জন্যই হয়ে থাকে, তবে হয়তো সংকট কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। কিন্তু যদি এটি একটি বৃহত্তর সামরিক অভিযানের সূচনা হয়, তাহলে তা প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভবিষ্যতকে ভয়ানক চাপে ফেলতে পারে।

এই হামলা নিয়ে আমেরিকার ভেতরেও বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেবল ডেমোক্র্যাটরাই নয়, ট্রাম্পের নিজস্ব 'আমেরিকা ফার্স্ট' ঘরানার অনেকে প্রশ্ন তুলছেন— এই যুদ্ধ কি দেশকে আরও জড়াবে বিদেশি সংঘাতে?

ভ্যান্সের মতো উপদেষ্টারা যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বলছেন ট্রাম্প এখনও 'অনাক্রমণবাদী' এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখা উচিত, কিন্তু এমন বক্তব্যে পুরো রিপাবলিকান পার্টির ভেতর ঐক্য বজায় রাখা কঠিন হবে যদি পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।

ট্রাম্পের রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, তিনি নিজের প্রথম মেয়াদে কোনো নতুন যুদ্ধ শুরু না করে গর্ব করতেন। এমনকি নির্বাচনী প্রচারে তিনি বারবার অন্য নেতাদের যুদ্ধনীতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন। কিন্তু এখন? তিনিই সেই নেতা যিনি একটি উত্তপ্ত অঞ্চলকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছেন।

এখন প্রশ্ন হলো— এই আগ্রাসী পদক্ষেপ কি শান্তির পথে যাবে, নাকি বিশ্বকে ঠেলে দেবে আরেকটি ভয়ংকর যুদ্ধে?

এই মুহূর্তে উত্তর অজানা। কিন্তু স্পষ্টতই বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এক ‘বড় জুয়া’ খেলেছেন— যার মূল্য দিতে হতে পারে গোটা বিশ্বের।

Комментариев нет


News Card Generator