মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে—আর এই উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ইরান ও ইসরায়েল। কিন্তু এমন সময়, যখন সবাই ধরেই নিচ্ছিল ইরানে আরও একটি বড় ধরণের হামলা চালাবে ইসরায়েল, ঠিক তখনই পরিস্থিতি মোড় নিল নাটকীয়ভাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ফোনালাপের পর নতুন হামলা থেকে সরে আসে তেলআভিভ। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দফতর থেকে এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের আগের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ইসরায়েল ‘যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন’ হিসেবে দেখছে। সেই প্রতিক্রিয়াতেই ইসরায়েল তেহরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাডার স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তারা দাবি করেছে, এটি ছিল প্রতিরক্ষামূলক এবং সীমিত পাল্টা পদক্ষেপ।
কিন্তু এরপরই আসে গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফোন। নেতানিয়াহুর দফতর জানায়, ফোনে ট্রাম্প ইসরায়েলকে তার 'যুদ্ধের সব লক্ষ্য পূরণ হয়েছে' বলে আশ্বস্ত করেন এবং অনুরোধ জানান নতুন করে আর কোনও হামলায় না যেতে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, যুদ্ধবিরতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে মধ্যপ্রাচ্যে কিছুটা হলেও স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
ফোনালাপের পরপরই নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত নেন—নতুন করে কোনও সামরিক অভিযান এখনই চালানো হবে না। এ যেন মধ্যপ্রাচ্যের বিস্ফোরণ ঠেকাতে শেষ মুহূর্তের আমেরিকান হস্তক্ষেপ। এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরেছে ইউরোপসহ আন্তর্জাতিক মহলে। তবে ইসরায়েল সতর্ক করে জানিয়েছে, ইরান যদি আবারও হামলা করে তবে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে তারা একটুও দেরি করবে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে ইসরায়েল সাময়িকভাবে থেমে গেলেও ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের আগুন নিভে যায়নি। বরং এই যুদ্ধবিরতি কেবল সময় কিনছে। যে কোনও সময় ফের বড় ধরণের সংঘর্ষ শুরু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই হস্তক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ এড়াতে চাইছেন। একদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছরে দেশে শান্তি বজায় রাখা, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে আমেরিকার 'শান্তির বার্তা' পৌঁছে দেওয়ার কৌশল হিসেবেই দেখা হচ্ছে এই সিদ্ধান্তকে।
অন্যদিকে ইসরায়েলি জনগণের মধ্যে এই হামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। কেউ বলছেন, নেতানিয়াহু সঠিক করেছেন, কেউ আবার ক্ষোভ প্রকাশ করছেন যে ইসরায়েল তার শক্তি প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তবে আপাতত যুদ্ধবিরতির রশি ধরে রেখেই মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে বিশ্ব।
নতুন কোনও উত্তেজনা কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তা আবারও টেনে নিতে পারে ভয়াবহ সংঘর্ষের দিকে।



















