তদন্তে এখনও অগ্রগতি নেই। তনুর মরদেহের দুইবার ময়নাতদন্ত হয়েছে। লাশের জামাকাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষায় অন্তত তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের পরিচয় আজও চিহ্নিত হয়নি।
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, "আমি আর বিচার চাই না। ৯ বছরে কিছুই পাইনি। আমি তো আসামির নামও বলেছিলাম, সার্জেন্ট জাহিদ। তাকে তো গ্রেপ্তার করা হয়নি।"
তনুর ভাই নাজমুল হোসেন বলেন, "তদন্ত কর্মকর্তারা শুধু আমাদের জবানবন্দি নিচ্ছেন বারবার। কিন্তু সত্যিকারের তদন্ত হচ্ছে না। আমাদের একরকম ঘেরাও করে রাখা হয়েছে।"
মামলার তদন্তে অগ্রগতি কতটুকু?
তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই-এর ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলাম বলেন, "তদন্তে অগ্রগতি আছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। অপরাধীদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে।"
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মতে, ধর্ষণের মামলাগুলোর মধ্যে মাত্র ৩% ক্ষেত্রে অপরাধীদের সাজা হয়। আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, "দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সাক্ষী পাওয়া যায় না। আসামিরা জামিন পেয়ে গেলে ভিকটিম ও সাক্ষীদের হুমকির মুখে পড়ে।"
মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, "ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ঘটনা বলেই তদন্ত শেষ হচ্ছে না।"
ধর্ষণের বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা বলেন, "১০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ঘটনায় সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়। পুলিশকে ঘুষ দিতে হয়, ফলে প্রভাবশালীরা মামলা ধামাচাপা দেয়।"
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৪০১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৮৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে মামলা হয় ৭০টি।
নতুন আইন পরিবর্তনের উদ্যোগ
সম্প্রতি মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় সরকার তদন্ত ১৫ দিনে ও বিচার ৩ মাসের মধ্যে শেষ করার বিধান সংযুক্ত করে আইন সংশোধন করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিচারক ও আদালতের সংখ্যা না বাড়ালে এর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, "বিচার ব্যবস্থায় সংস্কার প্রয়োজন। দ্রুত বিচার নয়, বরং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই মুখ্য।"
তনু হত্যাকাণ্ডের ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার হয়নি। এই মামলার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।