দেশজুড়ে ইন্টারনেট ব্যবহারে ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে সরকার বড় পরিসরে উদ্যোগ নিয়েছে। এবার সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নে একের পর এক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে। ইন্টারনেটের মূল্য তিনটি স্তরে কমানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে, এবং এবার মোবাইল অপারেটরদের প্রতিও জোরালো বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
সোমবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে ফয়েজ আহমদ লেখেন, ফাইবার অ্যাট হোম তিন স্তরে দাম কমাবে—আইটিসি ও আইআইজি স্তরে ১০ শতাংশ এবং এনটিটিএন স্তরে ১৫ শতাংশ। এতে করে ইন্টারনেট সরবরাহের পাইকারি পর্যায়ে খরচ অনেকটাই কমে আসবে।
তিনি জানান, এরই মধ্যে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে স্তরে তাদের সব ধরনের সেবায় ১০ শতাংশ মূল্যহ্রাস করেছে। একই সঙ্গে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের সংগঠন আইএসপিএবি জানিয়েছে, তারা গ্রাহকদের মাত্র ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট দেবে, যা আগে ছিলো ব্যয়বহুল।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন থেকেই সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটক ১০ শতাংশ মূল্যছাড় কার্যকর করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত বেসরকারি তিনটি মোবাইল অপারেটর—গ্রামীণফোন, রবিঃ ও বাংলালিংক—তাদের দাম কমানোর বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ফয়েজ আহমদ বলেন, “সরকার ইতিমধ্যেই অপারেটরদের ডিডব্লিউডিএম ও ডার্ক ফাইবার সুবিধা দিয়েছে। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে পাইকারি মূল্য কমানো হয়েছে। তাহলে বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের এখন মূল্য কমানো থেকে বিরত থাকার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।”
তিনি বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে দুই ধরনের মূল্যছাড় প্রত্যাশিত—প্রথমত, পূর্বে যেসব বাড়তি শুল্ক বা ট্যাক্সের কারণে অপারেটররা মূল্য বাড়িয়েছিল, তা অ্যাডজাস্ট করে কমাতে হবে। দ্বিতীয়ত, পাইকারি মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্রাহক পর্যায়েও দাম কমাতে হবে।”
এই উদ্যোগের মাধ্যমে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে বলে মনে করেন তিনি। তাঁর ভাষায়, “ইন্টারনেট এখন প্রয়োজন নয়, এটি একটি নাগরিক অধিকার। আর এই অধিকারকে সুলভ করার জন্যই এই উদ্যোগ।”
ফয়েজ আহমদ আরও বলেন, “বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের মান নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। গড় মানের তুলনায় দাম অনেক বেশি। এই অবস্থায় সরকার মনে করে, গ্রাহক স্বার্থে এখনই যৌক্তিক ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।”
এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকার ইন্টারনেটকে সাধারণ নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে বড় এক ধাপ এগিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বেসরকারি মোবাইল অপারেটররা এই আহ্বানে কীভাবে সাড়া দেয় এবং গ্রাহকরা কবে নাগাদ বাস্তব সুবিধা পেতে শুরু করেন।