দেশজুড়ে ইন্টারনেট মূল্য হ্রাসের সুবাতাস: এবার মোবাইল কোম্পানিগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে
বাংলাদেশে ইন্টারনেট খাতে বড় ধরনের মূল্যছাড়ের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে দেশের তিনটি স্তরে ইন্টারনেটের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। ফাইবার অ্যাট হোম, আইআইজি এবং এনটিটিএন স্তরে উল্লেখযোগ্য হারে দাম হ্রাস করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এবার মোবাইল কোম্পানিগুলোকেও সমানভাবে ইন্টারনেটের দাম কমানোর চাপ দেওয়া হচ্ছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সোমবার (২১ এপ্রিল) নিজের ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানান। তিনি উল্লেখ করেন, ফাইবার অ্যাট হোম আইটিসি পর্যায়ে ১০ শতাংশ, আইআইজি পর্যায়ে ১০ শতাংশ এবং এনটিটিএন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ইন্টারনেটের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগেই, আইএসপি লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা দিয়েছিল যে, ৫ এমবিপিএস সংযোগের পরিবর্তে এখন মাত্র ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস স্পিডের ইন্টারনেট দেওয়া হবে।
এটি দেশের ইন্টারনেট খাতের জন্য একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে যখন জনগণ মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক গেটওয়ের দামেও বড় ছাড়
এর আগেই বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে পর্যায়ে বড় ধরনের ছাড় ঘোষণা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি সকল আইআইজি ও আইএসপি গ্রাহকের জন্য ১০ শতাংশ এবং পাইকারি গ্রাহকদের জন্য অতিরিক্ত ১০ শতাংশ, মোট ২০ শতাংশ পর্যন্ত দাম কমিয়েছে। এতে ইন্টারনেট সেবার একাধিক স্তরে দাম হ্রাস পেয়ে এসেছে।
সরকারের এই ধারাবাহিক সিদ্ধান্তে এখন পর্যন্ত তিন থেকে চারটি স্তরে ইন্টারনেটের মূল্য কমানো হয়েছে। কেবল বাকি রয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট সেবাদাতা তিনটি প্রধান বেসরকারি কোম্পানির মূল্যছাড়ের ঘোষণা।
চাপের মুখে মোবাইল অপারেটররা
ফয়েজ আহমদ বলেন, এখন সময় হয়েছে মোবাইল কোম্পানিগুলোরও অংশগ্রহণের। তিনি উল্লেখ করেন, সরকার ইতিমধ্যেই বেসরকারি মোবাইল অপারেটরগুলোকে ডিডব্লিউডিএম ও ডার্ক ফাইবার সুবিধা প্রদান করেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল কোম্পানিগুলোর দাম না কমানোর আর কোনো যৌক্তিক কারণ অবশিষ্ট নেই। সরকারের পক্ষ থেকে পুরোপুরি পলিসি সাপোর্ট দেওয়ার পরেও যদি তারা মূল্য না কমায়, তাহলে তা জনগণের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ বলে বিবেচিত হবে।
ফয়েজ আহমদ আরও বলেন, “সরকার মোবাইল কোম্পানিগুলোকে যে সুবিধা দিয়েছে, তা যথেষ্ট। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাইকারি ইন্টারনেটের দাম কমানো হয়েছে। এখন মোবাইল কোম্পানিগুলোর উচিত এই উদ্যোগে শরিক হওয়া এবং গ্রাহকদের জন্য সাশ্রয়ী দামে ডেটা সেবা দেওয়া।”
মূল্যছাড়ে কমবে মূল্যস্ফীতি, বাড়বে ডিজিটাল প্রবেশগম্যতা
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানো হলে চলমান মূল্যস্ফীতির প্রভাব কিছুটা প্রশমিত হবে। মানুষ সহজে দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবে এবং শিক্ষা, ব্যবসা ও সামাজিক যোগাযোগ আরও সহজ হবে।
সরকার দুটি স্তরে মোবাইল কোম্পানিদের কাছ থেকে মূল্যছাড় প্রত্যাশা করছে:
১. তারা পূর্বে শুল্ক বৃদ্ধির অজুহাতে যে মূল্য বাড়িয়েছিল, তা কমানো।
২. আইটিসি, আইআইজি এবং এনটিটিএন পর্যায়ে পাইকারি দামে যে পরিমাণ হ্রাস দেওয়া হয়েছে, তার অনুপাতে গ্রাহক পর্যায়ে দাম কমানো।
সার্বিকভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আরেকটি ধাপ
সরকারের এই পরিকল্পনা শুধু ইন্টারনেটের দাম কমানো নয়, বরং একটি সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য ডিজিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার অংশ।
এখন দেখার বিষয়, মোবাইল কোম্পানিগুলো কতটা দ্রুত সরকারের আহ্বানে সাড়া দেয়। জনমনে এখন প্রশ্ন—এত সুবিধার পরেও তারা যদি দাম না কমায়, তবে কি সরকার পরবর্তী ধাপে বাধ্যতামূলক নীতিমালা নিতে বাধ্য হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুব শিগগিরই আমরা জানতে পারব, তবে এটুকু নিশ্চিত যে—ইন্টারনেটের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে আরও উজ্জ্বল হতে যাচ্ছে।
 'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  'আই নিউজ বিডি' অ্যাপ
  
  
 
		 
				 
			



















 
					     
			 
						 
			 
			 
			 
			 
			 
			