close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

তিন খানের যুগের সূর্য অস্তমিত হচ্ছে? বলিউডের রাজপাটে পরিবর্তনের ইঙ্গিত..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
বলিউডের ইতিহাসে তিনটি নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে—শাহরুখ খান, আমির খান ও সালমান খান।..

১৯৮৮ থেকে ২০২৩—এই দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময়জুড়ে বলিউডের রাজপাট কার্যত নিয়ন্ত্রণ করেছেন এই তিন খান। তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য কেবল ভারতেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বের হিন্দি চলচ্চিত্র দর্শকের মাঝে। কিন্তু সময় বলিউডের সিংহাসনে এখন যেন নতুন পরিবর্তনের ঘণ্টাধ্বনি বাজাচ্ছে।

এই তিন তারকার সাম্প্রতিক ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যেভাবে তারা ৯০-এর দশক ও ২০০০-এর দশকে ধারাবাহিক সফলতা এনে দিয়েছিলেন, আজকের দিনে সেই ধারাবাহিকতা আর অব্যাহত নেই। জনপ্রিয়তা আর স্টারডম থাকলেও—বক্স অফিস, কনটেন্ট ও দর্শকের প্রত্যাশা—সবকিছু মিলিয়ে ‘তিন খানের যুগ’ হয়তো শেষের দিকে এসে দাঁড়িয়েছে।


তিন খানের যাত্রা শুরু

  • শাহরুখ খান বলিউডে পা রাখেন ১৯৯২ সালে Deewana ছবির মাধ্যমে। রোমান্টিক হিরো হিসেবে তার জয়যাত্রা শুরু হয় Dilwale Dulhania Le Jayenge দিয়ে। এরপর একের পর এক ব্লকবাস্টারে অভিনয় করে তিনি হয়ে ওঠেন ‘বলিউড বাদশাহ’।

  • আমির খান ১৯৮৮ সালে Qayamat Se Qayamat Tak দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। শুরুর দিকের রোমান্টিক হিরো থেকে তিনি হয়ে ওঠেন বেছে বেছে কনটেন্টভিত্তিক ছবি করার ক্ষেত্রে পরিচিত একজন ‘পারফেকশনিস্ট’।

  • সালমান খান বলিউডে আসেন Maine Pyar Kiya (১৯৮৯) দিয়ে। ধীরে ধীরে স্টাইল, অ্যাকশন, এবং ম্যাস এন্টারটেইনমেন্ট সিনেমার রূপকার হয়ে ওঠেন তিনি।

তিন জনের ক্যারিয়ারে একাধিক মাইলফলক রয়েছে—3 Idiots, PK, Bajrangi Bhaijaan, Chennai Express, Dabangg, My Name Is Khan, Sultan, Ghajini, Dhoom 3, Kick, Fan ইত্যাদি।


২০১৮: মোড় ঘোরানো বছর

২০১৮ সালকে তিন খানের ক্যারিয়ারে একটি গুরুত্বপূর্ণ টার্নিং পয়েন্ট বলা চলে। এই বছরেই তারা প্রত্যেকেই একটি করে বড় বাজেটের ছবি নিয়ে আসেন এবং আশানুরূপ সাফল্য পাননি।

  • আমির খান অভিনীত Thugs of Hindostan মুক্তির আগেই হাইপ তৈরি করেছিল, কিন্তু মুক্তির পর দর্শকদের কাছ থেকে কঠিন সমালোচনার মুখে পড়ে এবং বক্স অফিসে ভয়াবহ ব্যর্থ হয়।

  • শাহরুখ খান এর Zero ছবিও একই ভাগ্য বরণ করে। অনেকদিন পর ভিন্নধর্মী চরিত্রে অভিনয় করলেও গল্প ও সংলাপ দর্শকদের মন ছুঁতে পারেনি।

  • সালমান খানের Race 3 যদিও প্রথম সপ্তাহে ভালো ব্যবসা করে, কিন্তু কনটেন্টের দুর্বলতার কারণে পরে দর্শকের আস্থা হারায়।


বিশ্রাম, প্রত্যাবর্তন এবং নতুন বাস্তবতা

শাহরুখ খান: রাজকীয় প্রত্যাবর্তনের পর হতাশা

চার বছরের বিরতির পর ২০২৩ সালে Pathaan দিয়ে ফিরে আসেন শাহরুখ খান। এই সিনেমাটি একের পর এক রেকর্ড ভেঙে বলিউডে নতুন প্রাণ আনেন। এরপর আসে Jawan, যেটিও একই রকম ব্লকবাস্টার। কিন্তু বছরের শেষ দিকে মুক্তি পাওয়া Dunki ছিল এক বিশাল প্রত্যাশার প্রতীক—কারণ এটি রাজকুমার হিরানির পরিচালনায় শাহরুখের প্রথম কাজ। কিন্তু ওভার হাইপ এবং দুর্বল স্ক্রিপ্টের কারণে মুভিটি দর্শকদের মন জয় করতে পারেনি। ফলাফল: মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ব্যবসায়িক ব্যর্থতা।

আমির খান: নিঃশব্দে হারিয়ে যাওয়া?

Thugs of Hindostan-এর ব্যর্থতার পর তিন বছর পর ২০২২ সালে Laal Singh Chaddha নিয়ে ফেরেন আমির। এটি ছিল হলিউড ক্লাসিক Forrest Gump-এর রিমেক। কিন্তু মুক্তির আগেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বয়কটের ডাক ওঠে। সমালোচনার মুখে পড়ে সিনেমাটি খুবই কম আয় করে এবং আমির আবারও আড়ালে চলে যান।

সালমান খান: স্টারডমে ভরসা, কনটেন্টে সংকট

সালমান খানের ক্ষেত্রে গ্যাপ কম হলেও মানসম্পন্ন কনটেন্টের অভাব প্রকট। Radhe, Kisi Ka Bhai Kisi Ki Jaan, Antim—সবগুলোই সমালোচিত হয়। তার স্টারডম কিছুটা ব্যবসা টিকিয়ে রাখলেও দর্শকের আস্থা ধীরে ধীরে কমছে। নতুন প্রজন্মের দর্শকরা এখন কনটেন্ট-ভিত্তিক সিনেমা চায়—যা সালমান হয়তো দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।


বলিউডের পরবর্তী অধ্যায় কার হাতে?

তিন খানের পতনের এই যুগে নতুন তারকারা উঠে আসছেন। রণবীর সিং, রণবীর কাপুর, আয়ুষ্মান খুরানা, ভিকি কৌশল, রাজকুমার রাও কিংবা দক্ষিণ ভারতীয় তারকা আল্লু অর্জুন, যশ, বিজয় সেতুপতিরাও বলিউডে শক্ত অবস্থান তৈরি করছেন। বিশেষত, দক্ষিণী সিনেমার প্রভাব এখন বলিউডকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।


তিন খানের রাজত্বের পতনের কারণসমূহ

১. দর্শকের রুচির পরিবর্তন: এখন দর্শক শুধুই স্টার দেখতে চায় না, চায় গভীরতা, গল্প ও বাস্তবতা। 2. ওটিটি প্ল্যাটফর্মের প্রভাব: মানুষ এখন সহজেই ভালো কনটেন্ট খুঁজে পায় ওটিটিতে, ফলে থিয়েটারে যাবার প্রয়োজন অনুভব করে না। 3. বয়স ও প্রাসঙ্গিকতা: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের রোমান্টিক হিরো বা অ্যাকশন হিরো হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে। 4. বয়কট কালচার: বিশেষ করে আমির এবং শাহরুখ খানের কিছু মন্তব্য বা রাজনৈতিক ইস্যু ঘিরে বহু মানুষ তাদের সিনেমা বয়কট করেছে।


শেষ কথা: কিংবদন্তিরা ইতিহাস গড়েন, কিন্তু যুগ পরিবর্তন অনিবার্য

তিন খানের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। তারা বলিউডকে দিয়েছে গ্লোবাল রূপ, দর্শকপ্রিয়তা, এবং এক মহিমাময় সময়কাল। তবে ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় একসময় শেষ হয়। তিন খানের যুগের সূর্য এখন অস্তমিত হওয়ার পথে। হয়তো শাহরুখ খান আরও কিছু সময় বলিউডে আলো ছড়াবেন, কিন্তু সমন্বিতভাবে তিন খানের যুগে একসঙ্গে রাজত্ব করার দিন বোধহয় আর নেই।

Nessun commento trovato