জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা পরিষদের এক বিশেষ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে— মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নাগরিক, সামরিক ঘাঁটি কিংবা অবকাঠামোর ওপর যেকোনো ধরনের হামলা চালানো হলে, এর প্রতিক্রিয়া হবে ভয়াবহ এবং ধ্বংসাত্মক।
এই বিবৃতি দেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়ক ব্যুরোর সিনিয়র কর্মকর্তা ম্যাককয় পিট। শুক্রবার, ১৩ জুন, জাতিসংঘে তিনি বলেন, “আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে এই অঞ্চলে আমাদের নাগরিক, কর্মী ও বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই অগ্রাধিকারে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না।”
তিনি আরও বলেন, “আমি পরিষ্কার করে জানিয়ে দিতে চাই— কোনো দেশ, প্রক্সি গোষ্ঠী কিংবা স্বাধীন কোনো শক্তি যেন আমেরিকানদের ওপর হামলার কথা চিন্তাও না করে। ইরানের জন্য এমন কোনো হামলার পরিণতি হবে ভয়ংকর, যা হয়তো তারা কল্পনাও করতে পারবে না।”
গত শুক্রবারই ইসরাইল ইরানের একাধিক পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়। এই হামলায় নিহত হন ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় পরমাণু বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তা। নিহতদের মধ্যে অন্যতম হলেন ইরানের আধাসামরিক বিপ্লবী গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেইন সালামি এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে এই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলের এই হামলা ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে থামিয়ে দেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত প্রয়াস।
ইসরাইলের এই হামলার জবাবে ইরান সরাসরি পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানায়। তেহরান থেকে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় তেল আবিব লক্ষ্য করে।
যদিও ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত এখনও প্রকাশ্যে আসেনি, তবে ইসরাইল দাবি করেছে যে তারা বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথেই প্রতিহত করেছে।
এই পাল্টা-পাল্টি হামলায় পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনগুলোতে এই সংঘাত আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
ম্যাককয় পিট বলেন, “আমরা আগেই জানতাম যে ইসরাইল একটি প্রতিরক্ষামূলক হামলা চালাতে যাচ্ছে। তারা আমাদের অবগত করেছে। তবে এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সামরিক সম্পৃক্ততা ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, “ইসরাইল একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র, এবং প্রতিটি সার্বভৌম জাতির আত্মরক্ষার অধিকার আছে। ইসরাইলও সেই অধিকার প্রয়োগ করেছে মাত্র।”
মধ্যপ্রাচ্যে এমন অস্থিরতা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরান ও ইসরাইলের সরাসরি সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়লে তা হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রারম্ভিক অধ্যায়।
জাতিসংঘের মহাসচিব শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানালেও, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এখন দেখার বিষয়— ইরান যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি আমলে নেয় কিনা, নাকি জবাব দিতে প্রস্তুত হয় আরেকটি আঘাতে।
মধ্যপ্রাচ্যে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের সামরিক সংঘর্ষ। ইসরাইলের হামলার জবাবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং এর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া হুঁশিয়ারি— সব মিলিয়ে উত্তেজনার পারদ এখন তুঙ্গে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন পুরো বিশ্বের নজরে।



















