২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলার খালাসপ্রাপ্ত সব আসামির বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রোববার (১ জুন) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন গ্রহণ করে এই আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জাব্বার ভূঁইয়া। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও মোহাম্মদ শিশির মনির। বিএনপির হয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ অনেকে।
উল্লেখ্য, গত ১২ জানুয়ারি হাইকোর্ট থেকে বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়, যেখানে বিচারিক আদালতের দেওয়া ফাঁসি ও যাবজ্জীবনের সাজা বাতিল করে সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ রায় দিয়ে বলেন, মামলা ও বিচার প্রক্রিয়া অবৈধ ছিল।
এর আগে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, নেতা কায়কোবাদসহ আরও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
রায়ের নথিপত্র ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে পাঠানো হয়। প্রায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার নথির ওপর ভিত্তি করে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য সাড়ে ১০ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়।
এ মামলার পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, কায়কোবাদসহ আরও অনেকে। এদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় নিহত হন ২৪ জন, আহত হন শতাধিক। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি হারান।
লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, আবদুর রহিম, মো. হানিফ, মাওলানা তাজউদ্দীন, শেখ ফরিদ, আবু সাইদ, আবু জান্দাল, আবু তাহের, ইউসুফ ভাট, মালেক, মহিবুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ, জাহাঙ্গীর আলম, তামিম, রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জ্বল।
তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, কায়কোবাদ, মুফতি শফিকুর রহমান, আবদুল হাই, রাতুল বাবু, সাব্বির, সুজন, আবু হোমাইরা, ইয়াহিয়া, আবু বকর, আরিফুল, মুত্তাকিন, মুরছালিন, খলিল, বদর, ইকবাল, লিটন।
এই মামলায় আপিল বিভাগে নতুন করে আপিলের অনুমতি দেওয়ায় এখন উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য পথ খুলে গেল। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে উপযুক্ত যুক্তি তুলে ধরতে পারবেন।
এই আদেশে নতুন করে আলোচনায় এসেছে একুশে আগস্টের সেই ভয়াল দিন এবং এর বিচার প্রক্রিয়া। এখন দেখার বিষয়, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত আসে, যা এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন মোড় আনতে পারে।



















