তারেক রহমানের বক্তব্যে উত্তরে যা বললেন সারজিস

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ও বাকস্বাধীনতা হরণের অভিযোগ তুললেন তারেক রহমান। তার বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলমও সমালোচনা করলেন কিছু সংবাদমাধ্যমের ‘প্রোপাগান্..

বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা, সাংবাদিকতার নৈতিকতা এবং একদলীয় শাসনের অভিযোগ নিয়ে ফের উত্তপ্ত হলো রাজনৈতিক অঙ্গন। সোমবার সকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটি বিতর্কিত পোস্ট দেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে, যেখানে তিনি শেখ হাসিনা সরকারকে একদলীয় শাসনব্যবস্থার পুনরাবৃত্তিকারী হিসেবে অভিযুক্ত করেন। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, স্বাধীনতার পর থেকেই সাংবাদিক ও সংবাদপত্রকে দমন করার জন্য কালাকানুন তৈরি করে আসছে আওয়ামী লীগ।

তারেক রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন ইতিহাসের এক অন্ধকার দিন। সেদিন বাকশাল কায়েম করে সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে বাকস্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। বেকার হয়ে পড়েন বহু সাংবাদিক, অনিশ্চয়তায় পড়ে তাদের পরিবার। তিনি বলেন, “এটা ছিল স্বাধীনতার মূল চেতনার সরাসরি পরিপন্থী। গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা—যা আওয়ামী লীগ বারবার হরণ করেছে।”

তারেক রহমানের এই পোস্টটি ভাইরাল হতেই কমেন্ট সেকশনে হাজারো প্রতিক্রিয়া জমা পড়তে থাকে। সেই তালিকায় যুক্ত হন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমও। তিনি মন্তব্যে তারেক রহমানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন এবং বর্তমান মিডিয়া কাঠামোকে হুশিয়ার করে বলেন, “সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর অপব্যবহারও ভয়ংকর ক্ষতির কারণ হতে পারে।”

 

সারজিস লিখেছেন, “বর্তমানে এমন অনেক সংবাদমাধ্যম দেখা যায়, যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বা টিআরপি বাড়ানোর জন্য প্রোপাগান্ডা ছড়ায়। ভুয়া সংবাদ দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ধ্বংস করে আবার কিছুক্ষণ পর সেটি মুছে ফেলে। কিন্তু ক্ষতিটা হয়ে যায়। এটি কোনোভাবেই সাংবাদিকতার নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক মিডিয়া হাউজ আগে আওয়ামী লীগকে খোলাখুলি সমর্থন করতো। এখনো তারা সেই মানসিকতা থেকে বের হতে পারেনি। তারা এখনো শিরোনামে পক্ষপাতদুষ্টতা দেখায়। অথচ সাংবাদিকতার প্রধান শর্ত হলো নিরপেক্ষতা।”

 

তারেক রহমান পোস্টে বলেন, “ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পরও গণমাধ্যম পুরোপুরি মুক্ত হয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো ভয়ংকর আইন প্রণয়ন করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। এমনকি আজও সাংবাদিকদের মনে ভয় ঢুকিয়ে রাখা হচ্ছে—যেন তারা ‘সত্য’ বলতে সাহস না পায়।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের একটি প্রধান স্তম্ভ। এটি অবরুদ্ধ থাকলে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে না। বহুদলীয় গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে হলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।”

 

সারজিস আলম প্রশ্ন তুলেছেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা জরুরি, তবে যদি কেউ সেই স্বাধীনতাকে ভুলভাবে ব্যবহার করে, তাহলে সেই দায়ও তাকে নিতে হবে। কোনো হাউজ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা প্রচার চালায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তদন্ত ও শাস্তির ব্যবস্থা থাকা উচিত।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা এমন একটি মিডিয়া চাই—যেটি সত্য প্রচার করবে, পক্ষপাত নয়। গণতন্ত্রের জন্য দায়বদ্ধ সংবাদমাধ্যমই দেশকে এগিয়ে নিতে পারে।”

 

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। তারেক রহমানের পোস্ট ও সারজিস আলমের মন্তব্য আবারও দেখিয়ে দিল—এই ইস্যু এখনও কতটা জীবন্ত ও বিতর্কিত। একদিকে রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থার দমননীতি, অন্যদিকে সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা ও দায়িত্বজ্ঞান—এই দুইয়ের ভারসাম্য বজায় রাখাই আজ সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

No comments found


News Card Generator