গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানায় আলোচিত এক চাঁদাবাজির ঘটনায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে এক নারী ও তার পরিবারকে ২০ লাখ টাকা দাবি করে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে।
এই ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে সংগঠনের টঙ্গী পূর্ব থানার সদস্যসচিব আকাশ খানসহ আরও ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১২ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিরিন সরকার কনা শুক্রবার (৩০ মে) এই মামলা দায়ের করেন। তিনি টঙ্গী পূর্ব থানাধীন মধ্য আরিচপুর (শেরে বাংলা রোড) এলাকার বাসিন্দা এবং মৃত নায়েব আলী সরকারের মেয়ে। তার স্বামীর নাম আবুল হোসেন।
অভিযুক্তরা হলেন— টঙ্গীর আকাশ খান (২২), ইমতিয়াজ শুভ (২২), মোক্তার (২০), ইফতেখার শুভ (২১), আসিফ (২০), পিয়াস ঘোষ প্রিন্স (২২) এবং আরও অজ্ঞাত ১২ জন।
ভাইরাল ভিডিওর চাঞ্চল্য
একটি ১৯ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, টঙ্গী পূর্ব থানার সামনে কিছু যুবক আকাশ খানকে প্রশ্ন করছেন— কেন তিনি ভুক্তভোগী নারীর বাসায় গিয়ে তার স্বামীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন এবং সেখান থেকে কেন ২৬ হাজার টাকা নিয়ে এসেছেন। উত্তরে আকাশ খান দাবি করেন, “আমি টাকা নিইনি, আমার পাশে যারা ছিল, তারাই নিয়েছে।”
এই ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হয়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলে, যেখানে অনেকেই ছাত্রনেতার এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করেন।
ভুক্তভোগীর অভিযোগে কী বলা হয়েছে?
শিরিন সরকার কনার দায়েরকৃত অভিযোগ অনুযায়ী, বুধবার (২৮ মে) রাত ১০টা ৩০ মিনিটে অভিযুক্তরা অজ্ঞাত সহযোগীদের নিয়ে তার বাসায় উপস্থিত হয়। নিজেদের “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের” নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে তারা জানায়, তার স্বামীর নামে চারটি মামলা রয়েছে। এসব মামলা ম্যানেজ করে দেওয়ার কথা বলে ২০ লাখ টাকা দাবি করে তারা।
চাঁদার টাকা না দিলে তার স্বামীকে “তুলে নেওয়া” ও বড় ধরনের ক্ষতির ভয় দেখানো হয়। একপর্যায়ে ভীত হয়ে তারা ৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। কিন্তু ওই সময় টাকা না থাকায় পরদিন টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে অভিযুক্তরা জোরপূর্বক চাপ সৃষ্টি করে এবং ২৫ হাজার টাকা আদায় করে। পাশাপাশি ১শ টাকার স্ট্যাম্পে জোর করে তার সইও নেয়।
পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অভিযুক্তরা আবার তাদের বাসায় এসে তাদের অনুপস্থিতিতে ভুক্তভোগীর ছেলের ফোনে কল দিয়ে দাবি করা টাকা ফেরত চায়। সময়মতো টাকা না দিলে পরিবারের সদস্যদের নামে মিথ্যা মামলা, এমনকি শারীরিকভাবে আক্রমণের হুমকি দেওয়া হয়।
থানার সামনেই প্রকাশ্য জিজ্ঞাসাবাদ ও বাগবিতণ্ডা
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিরিন কনা ও তার পরিবারের সদস্যরা থানায় অভিযোগ করতে গেলে অভিযুক্ত আকাশ খানের সঙ্গে তাদের মুখোমুখি দেখা হয়। সেখানে চাঁদাবাজির কারণ জানতে চাইলে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়, যা তাৎক্ষণিকভাবে সামাজিকমাধ্যমে লাইভ করা হয়। এই ভিডিওর সূত্র ধরে ঘটনা দ্রুত গাজীপুরজুড়ে আলোচনায় আসে।
সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা
ঘটনার জেরে শুক্রবার বিকেলে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর গাজীপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নাবিল আল ওয়ালিদ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সেখানে বলা হয়, জেলার সব থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। একইসাথে, সংগঠনটি জানিয়ে দেয়— কেউ যদি তাদের পরিচয় বা পদ ব্যবহার করে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়ায়, তাহলে সংগঠন তার দায় নেবে না এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করবে।
পুলিশের অবস্থান
টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে।”