শেরপুরে জমি লেনদেন সংক্রান্ত এক গোপন অভিযানে নাটকীয় মোড় নেয় দেশের রাজনীতিতে আলোচিত এক অধ্যায়। সাবেক ভূমিমন্ত্রী এবং জামালপুর সদর-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রেজাউল করিম হিরা মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে স্ত্রীসহ পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটে শেরপুর জেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে জমি বিক্রয়ের সময়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে নজরদারিতে রেখেছিল হিরাকে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জমি রেজিস্ট্রেশনের সময় হঠাৎ করেই পুলিশের একটি বিশেষ টিম তাকে ঘিরে ফেলে। সাথে সাথে তাকে আটক করে সরাসরি শেরপুর সদর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
তাকে আটকের সময় তার পাশে ছিলেন তার স্ত্রী। যদিও শুরুতে হিরা দাবি করেন, তিনি একজন সাধারণ ক্রেতা হিসেবে জমির দলিল সম্পাদনে এসেছেন, তবে গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, জমির দলিলে নানা অনিয়ম এবং অসঙ্গতির প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।
ঘটনার পরপরই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল এবং বিএনপিপন্থী সাধারণ জনতা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা হিরার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিচার দাবি করে এবং "দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন" – এই স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই জমি লেনদেনে অবৈধ অর্থ লেনদেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি এমন কিছু লেনদেনের তথ্য গোয়েন্দা সংস্থা হাতে পায় যা তাকে সরাসরি অভিযুক্ত করে।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, “আমরা পর্যাপ্ত তথ্য ও নথিপত্র সংগ্রহ করেছি যেগুলো সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে স্পষ্ট করে। আদালতের নির্দেশ পেলে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হবে।”
এদিকে হিরার আইনজীবী দাবি করেছেন, তার মক্কেল সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ এবং এই ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, “হিরা সাহেব একজন জাতীয় পর্যায়ের বর্ষীয়ান রাজনীতিক। তাঁকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে এই অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।”
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হিরা দীর্ঘদিন ধরেই জমি সংক্রান্ত নানা লেনদেনে জড়িত ছিলেন এবং এর আগেও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছিল। তবে এবারই প্রথমবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরাসরি ব্যবস্থা নিল।
পুলিশ জানায়, তাকে আপাতত শেরপুর সদর থানায় রাখা হয়েছে এবং তদন্তের অগ্রগতি অনুযায়ী পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই ঘটনায় জেলা প্রশাসন, স্থানীয় রাজনীতি এবং ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, ক্ষমতার আড়ালে গোপন দুর্নীতির চক্র কতটা গভীর। সাবেক একজন ভূমিমন্ত্রী, যিনি একসময় দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তিনিই আজ অভিযুক্ত দুর্নীতির মামলায়। তদন্তের অগ্রগতির দিকেই তাকিয়ে আছে সারাদেশ।