ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার এওয়াজপুর ইউনিয়নে ঘটে গেছে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ মানসুরের বিরুদ্ধে স্ত্রীর স্বীকৃতি না দেওয়ার অভিযোগ তুলে তার বাড়ির সামনেই অনশনে বসেছেন ২৫ বছর বয়সী এক তরুণী।
শুক্রবার (২ মে) বিকেল থেকে এ অনশন শুরু হয়, যা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনা ও উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।
তরুণীর দাবি, তিন বছর আগে শুরু হয়েছিল তাদের প্রেমের সম্পর্ক। আত্মীয়তার সূত্রে পূর্বপরিচিত সাইফুল্লাহ একদিন হঠাৎ প্রেমের প্রস্তাব দেন। তারপর নিয়মিত ফোনালাপের মাধ্যমে সম্পর্ক আরও গভীর হয়। তরুণীর ভাষায়, “সে আমাকে ভালোবাসার কথা বলত, বিয়ের স্বপ্ন দেখাত। একপর্যায়ে আমরা কাউকে না জানিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি এবং ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন সংসার করি।”
তরুণী জানান, ঢাকায় তারা দম্পতির মতোই বসবাস করতেন। সাইফুল্লাহ তার সব খরচ চালাতেন বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে। পরে সাইফুল্লাহ গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান কাজের অজুহাতে, তবে তরুণীকে ঢাকায় একা রেখে দেন।
কিন্তু এরপর শুরু হয় সমস্যা। একসময় সাইফুল্লাহ আর কোনো খোঁজ নেন না। এমনকি তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলেও তরুণীকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায় পরিবার। তরুণীর কণ্ঠে হতাশা—“সে আমাকে বিয়ে করেছে, সংসার করেছে। এখন পরিবার মানছে না বলে সে আমাকে অস্বীকার করছে। আমি কি তাহলে খেলনা?”
সবশেষে, বাধ্য হয়ে তরুণী সরাসরি চলে আসেন সাইফুল্লাহর গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই তিনি অনশন শুরু করেন স্ত্রীর স্বীকৃতির দাবিতে। তার স্পষ্ট বক্তব্য, “আমি স্বীকৃতি না পেলে আত্মহত্যা করব। জীবনের আর কোনো অর্থ নেই।”
অন্যদিকে, এ ঘটনার পর থেকেই সাইফুল্লাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগও সম্ভব হয়নি। এলাকাবাসী বলছে, তারা এমন পরিস্থিতি আগে কখনো দেখেনি। অনেকেই বলছেন, “যদি মেয়েটির অভিযোগ সত্য হয়, তাহলে এটা নিছক অন্যায় নয়, এটা প্রতারণা।”
চরফ্যাশন উপজেলা জামায়াতের আমীর মীর শরীফ সংবাদমাধ্যমকে জানান, “তারা আত্মীয়, তাই বিষয়টি আমাদের কাছে স্পর্শকাতর। এটি ষড়যন্ত্রমূলকও হতে পারে। আমরা বিষয়টি যাচাই করে দেখব এবং প্রয়োজনীয় আলোচনা করব।”
এদিকে তরুণীর নিরাপত্তা ও অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শশীভূষণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিক হাসান রাসেল। তিনি বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এ ঘটনা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকেই বলছেন—প্রেম, বিয়ে ও সংসারের পর যদি একজন নারীকে স্বীকৃতি না দেওয়া হয়, সেটি কেবল ব্যক্তি নয়, সমাজেরও ব্যর্থতা।
এই ঘটনার পেছনে রয়েছে প্রেম, প্রতারণা, সমাজের চাপ ও রাজনৈতিক নেতার দ্বৈত চরিত্র। একজন নেতার কাছে যেমন দায়বদ্ধতা থাকা উচিত সমাজ ও নীতির প্রতি, তেমনি ব্যক্তিগত সম্পর্কেও থাকা উচিত সততা ও দায়িত্ববোধ। প্রশ্ন উঠছে—রাজনৈতিক পদে থাকা একজন ব্যক্তি কি এই ধরনের আচরণ করতে পারেন?