রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু, যিনি গত এক দশক ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত—তাঁর বিরুদ্ধে এবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বড়সড় আঘাত হেনেছে। তাঁর বিরুদ্ধে ১০ কোটির বেশি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগে মামলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই মামলায় তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকেও আসামি করা হয়েছে।
আজ (রবিবার, ২৯ জুন) সকালে দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। তিনি জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে আজিজুল আলম বেন্টু, তাঁর স্ত্রী নাসিমা আলম ও ছেলে রুহিত আমিনের নামে বিপুল পরিমাণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে, যার প্রকৃত উৎস সম্পর্কে কোনো বৈধ ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তাঁরা।
দুদকের অভিযোগ অনুসারে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেন্টু রাজশাহীর একচেটিয়া বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি পান। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি অল্প টাকায় বালুমহাল ইজারা নেন এবং সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর সম্পদ পাহাড় গড়ার যাত্রা।
এই ব্যবসা থেকেই বেন্টু কোটি টাকার মালিক হন। অনুসন্ধান বলছে, তাঁর গৃহবধূ স্ত্রী নাসিমা আলম ও ছাত্র পুত্র রুহিত আমিনের নামে সম্পদের রেকর্ড রয়েছে, কিন্তু তাঁদের আয়ের কোনও স্বচ্ছ উৎস নেই।
দুদকের অনুসন্ধান বলছে, বেন্টু ও তাঁর পরিবারের নামে ৩৬টি জমির দলিল পাওয়া গেছে, যার পরিমাণ প্রায় ৯.৪ একর। এই সম্পদের বর্তমান মূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
কিন্তু তাঁদের সম্পদ বিবরণীতে দুদককে জানানো হয়েছে মাত্র ৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রায় ১০ কোটি ৪৬ লাখ টাকার সম্পদ সম্পূর্ণভাবে গোপন করা হয়েছে, যা সরাসরি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের আওতাভুক্ত।
নাসিমা আলম, যিনি একজন গৃহবধূ, তাঁর নামে খোলা হয়েছে আয়কর নথি (TIN নম্বর: ৫৮৫৬৫৯৪৭৫১৯৬)। ২০২৩-২৪ করবর্ষে তিনি দেখিয়েছেন প্রায় ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার সম্পদ, যার কোনও বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।
একইভাবে, রুহিত আমিন, যিনি পেশায় একজন ছাত্র, তাঁর নামেও খোলা হয়েছে আয়কর নথি (TIN নম্বর: ৫৯২৮১৫৩২০৬০৩)। সেখানে দেখানো হয়েছে প্রায় ৭৮ লাখ ৫২ হাজার টাকার সম্পদ। অনুসন্ধানে তাঁরও কোনও বৈধ আয় দেখানো হয়নি।
এছাড়া, বেন্টু তাঁদের গাড়ি কেনার জন্যও দিয়েছেন ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, যা কর নথিতে উল্লেখ আছে। সব মিলিয়ে স্পষ্ট, তাঁর স্ত্রী-ছেলের নামে সম্পদ রেখে তা বৈধ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন তিনি।
দুদক মামলায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, স্ত্রী নাসিমা আলম এবং ছেলে রুহিত আমিন নিজের নামে আয়কর ফাইল খুলে বেন্টুর অর্জিত অবৈধ সম্পদকে বৈধ করার চেষ্টা করেছেন।
তাঁদেরকে দুর্নীতিতে সহায়তা ও অবৈধ সম্পদ ভোগদখলের অভিযোগে মামলার সহ-আসামি করা হয়েছে। মামলার পর পরই দুদক এই বিষয়ে বিস্তারিত নথি রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে জমা দিয়েছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলেও জানিয়েছেন মামলার বাদী দুদকের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন।
এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—ক্ষমতা থাকলেই কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। স্ত্রী-সন্তানের নাম ব্যবহার করে সম্পদ গচ্ছিত রাখার এই কৌশল বহু পুরোনো হলেও, দুদকের সক্রিয় অনুসন্ধানে তা এবারও ফাঁস হয়ে গেল।



















