close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

সরকারকে শত্রু মনে করে মানুষ: প্রধান উপদেষ্টা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার এক বছর পর মুখ খুললেন। জানালেন, জনগণ সরকারকে দেখে ভয়ংকর এক শত্রু হিসেবে, যেখানে প্রতিটি স্তরে ছড়ানো দুর্নীতি। তবে ত..

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, দেশের জনগণ এখন সরকারকে বন্ধু নয়, বরং শত্রু হিসেবেই দেখে। এই শত্রুতা গড়ে উঠেছে অব্যাহত দুর্নীতি, অবিচার এবং নাগরিক সুবিধাবঞ্চনার মাধ্যমে।

 

ড. ইউনূস বলেন, “মানুষ সরকারকে দেখে স্থায়ী শত্রু হিসেবে। তারা চায় না সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে। কারণ, এই সরকার তাদের প্রতিনিয়ত শোষণ করছে।” তার মতে, সরকারী দপ্তর থেকে শুরু করে পাসপোর্ট অফিস, ব্যবসার লাইসেন্সিং সিস্টেম, স্বাস্থ্যসেবা—সব জায়গায় ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। কেউ না কেউ সবসময় টাকার জন্য মুখিয়ে থাকে।

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতি এমন একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলে, যেখানে রাষ্ট্রের কাঠামোই যেন দুর্নীতির উপরে দাঁড়িয়ে আছে। আর এই বাস্তবতাই জনগণকে সরকারবিমুখ করে তুলেছে।

 

২০২৪ সালের গ্রীষ্মে শেখ হাসিনার সরকার ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে পতনের মুখে পড়ে। সেই সময় ছাত্রদের মূল দাবি ছিল কোটা পদ্ধতির সংস্কার, যা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠদের জন্য বিশেষ সুবিধা তৈরি করছিল। এরপর বাড়তি জীবনযাত্রার খরচ, কর্মসংস্থানের অভাব এবং দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ তরুণ সমাজ রাস্তায় নামে।

এই আন্দোলনের ফলেই ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে আসেন। তিনি জানান, “আমরা যখন দায়িত্ব নিই, তখন প্রশাসন ভেঙে পড়েছিল। বিল পরিশোধ করা নিয়েও অনিশ্চয়তা ছিল। ব্যাংকগুলো ঋণ দিচ্ছিল জানত যে তা আর ফেরত আসবে না। সবকিছু ছিল বিশৃঙ্খল।”

 

ড. ইউনূস স্পষ্টভাবে বলেন, “গ্রাম থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতি নির্মূল করা ছাড়া বিকল্প নেই। মানুষকে নতুন করে বিশ্বাস করাতে হবে যে এই রাষ্ট্র তাদের জন্য কাজ করছে।”

এই উদ্দেশ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার একাধিক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। নির্বাচন, জনকল্যাণ ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা—এই তিনটি খাতে মৌলিক সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি চান এই প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো নিয়ে একটি চূড়ান্ত দলিল হোক—“জুলাই সনদ”—যা এপ্রিল নির্বাচনের আগে কার্যকর করা হবে। তিনি বলেন, “এটি কোনো সাধারণ সুপারিশ নয়। এটি হবে নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা।”

 

সংস্কার সহজ হবে না—এই কথাও স্বীকার করেছেন ইউনূস। বিশেষ করে বিএনপি এখন সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল, যারা দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সরব। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত করার প্রস্তাবেও তারা আপত্তি জানিয়েছে।

তবুও ইউনূস আশাবাদী। তিনি বলেছেন, “দলগুলো আগেও একসাথে কাজ করার নজির রাখেনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা যে ধরনের সহযোগিতা করছে, তা উৎসাহব্যঞ্জক।

 

ড. ইউনূস চান রাষ্ট্র একটি সেবাধর্মী চরিত্র ধারণ করুক। তিনি অলাভজনক সামাজিক উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে চান—বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবায়। একই সঙ্গে, ক্ষুদ্রঋণের মডেলকে শক্তিশালী করতে চান, যাতে দরিদ্র মানুষ প্রচলিত ব্যাংকিং সিস্টেমের বাইরে গিয়েও আত্মনির্ভরশীল হতে পারেন।

তিনি বলেন, “ক্ষুদ্রঋণে কোনো ভুল নেই। এটা দরিদ্র মানুষের শোষণ নয়, বরং তাদের মুক্তির পথ। যাদের এটা খারাপ মনে হয়, তারা বুঝতে পারেনি এর প্রকৃত শক্তি।

 

ড. ইউনূস বাংলাদেশের প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে দায়ী করেন অর্থনৈতিক ভাঙনের জন্য। তিনি বলেন, “দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে এই ব্যবস্থা ব্যবহার করা সম্ভব নয়। তারা সুযোগ পায় না। এর ওপর, যারা সুবিধা পায়—তারা ঋণ পরিশোধ না করেও পার পেয়ে যায়। ফলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, আর সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

ড. ইউনূস বলেন, “আমি এখানে স্থায়ী হতে আসিনি। এপ্রিলের নির্বাচনের পর আমি ফিরে যাব। তবে তার আগে আমি যতটা সম্ভব সংস্কার বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”

তিনি আরও বলেন, “আগে আমাকে কেবল আওয়ামী লীগই সমালোচনা করত, এখন সব পক্ষই করে। এটি একটি খেলা, আর আমি জানি এই খেলায় কীভাবে টিকে থাকতে হয়।

 

বাংলাদেশ বর্তমানে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রশাসন, নষ্ট রাজনীতি ও সর্বব্যাপী দুর্নীতি—অন্যদিকে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন। ড. ইউনূস ও তার অন্তর্বর্তী সরকার এখন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। বাস্তবতা কঠিন, পথ বন্ধুর—তবুও যদি রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারে, তাহলে ভবিষ্যৎ হয়তো একটু আলোকিত হতে পারে।

No comments found