close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

সরকারি চাকরিজীবীদের দাবিতে ছুটির দিনেও উত্তাল রাজপথ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ছুটির দিনেও রাজপথে নেমেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ‘সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ’ বাতিল, ভাতা পুনর্বহাল এবং নবম পে-স্কেলসহ সাত দফা দাবিতে শুক্রবারও থেমে থাকেনি আন্দোলন। বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি—রবিবার ..

ঢাকার রাজপথে আজ শুক্রবারের সকাল যেন অন্যরকম বার্তা বয়ে আনলো। ছুটির দিনেও থেমে থাকেনি ক্ষোভ, থেমে থাকেনি প্রতিবাদ।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়েছিলেন শত শত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। ঘড়ির কাঁটা যখন বেলা ১১টা ছুঁয়েছে, তখন থেকেই গর্জে ওঠে বিক্ষোভকারীদের কণ্ঠ— ‘কালো আইন মানি না, মানবো না!’

এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম এবং বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ। তাদের মূল দাবি, সদ্য জারিকৃত ‘সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ’ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। তারা একে সরাসরি ‘কর্মচারীবিরোধী ও কালো আইন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করছেন, নতুন চাকরি অধ্যাদেশের মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। আইনটি কার্যকর হলে বিভিন্ন বিশেষ সুবিধা ও পূর্বঘোষিত প্রণোদনা বাতিল হয়ে যাবে বলে তাদের আশঙ্কা।

বিশেষ করে ১৫ শতাংশ সুবিধা ভাতা বাতিলের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। কারণ, এতে তাদের আগের ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনকারীদের মতে, “এটি কোনো সুবিধা নয়, বরং লুকানো ক্ষতি।”

এদিনের বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা সরকারের কাছে সাত দফা দাবি তুলে ধরেছেন। দাবিগুলোর মধ্যে প্রধানত রয়েছে—

  1. সদ্য জারি করা ‘সরকারি চাকরি আইন’ বাতিল

  2. ১৫ শতাংশ সুবিধা ভাতা প্রত্যাহার

  3. পূর্বের ৫% বিশেষ প্রণোদনা পুনর্বহাল

  4. ৫০% মহার্ঘ ভাতা প্রদান

  5. নতুন নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন

  6. চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

  7. নিয়োগ, বদলি ও অবসরের নিয়মে স্বচ্ছতা আনা

এই আন্দোলনের মাত্র শুরু বলে জানিয়েছেন নেতারা। আজকের এই বিক্ষোভ ছিল কেবল প্রতিবাদ। কিন্তু আসছে রবিবার (২৩ জুন) থেকে শুরু হতে যাচ্ছে কঠোর কর্মসূচি

নেতাদের বক্তব্য,-আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বোঝাতে চাইছি—এই আইন আমাদের জন্য হুমকি। যদি সরকার আমাদের দাবি না মানে, তাহলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।

সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এখন এক প্ল্যাটফর্মে। ডাক, টেলিযোগাযোগ, সড়ক, শিক্ষা, প্রশাসন—প্রায় সব বিভাগ থেকেই যোগ দিচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অনেকেই বলছেন, এই আন্দোলন কেবল বেতন বা ভাতার জন্য নয়, “এটা হলো মর্যাদা রক্ষার লড়াই।”

একজন সরকারি কর্মচারীর কণ্ঠে শোনা গেল ক্ষোভের প্রকাশ—চাকরি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হবে, কোনো কথা বলা যাবে না, সুযোগ-সুবিধা কাটছাঁট করা হবে — এটা কোন ধরনের চাকরি?”

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে যখন দেশের অর্থনৈতিক চাপে সরকার কিছু খরচ সংকোচনের পথে হাঁটছে, তখন এ ধরনের কর্মচারী আন্দোলন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষ করে বেতন-ভাতা ইস্যুতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামছেন, তা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন অনেকে।

এখন প্রশ্ন হলো—সরকার কি দাবি মেনে পিছু হটবে, না কি সামনে আরও সংঘর্ষের পথে যাবে এই আন্দোলন?

এদিকে রোববারের কর্মসূচিকে সামনে রেখে সরকারি প্রশাসনেও চাপ বাড়ছে।
অফিসিয়ালি এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না এলেও, আন্দোলনকারীরা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন—চুপ থাকলে চলবে না, এবার আমাদের জীবন ও জীবিকার প্রশ্ন।

ছুটির দিনেও যেভাবে রাজপথে সরব হয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, তাতে স্পষ্ট—এই আন্দোলন এখন আর ছোট পরিসরের কোনো ক্ষোভ নয়, এটি ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে একটি জাতীয় কর্মচারী আন্দোলনে
রোববার থেকে যদি কঠোর কর্মসূচি শুরু হয়, তাহলে দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রমও পড়তে পারে স্থবিরতায়।

সরকারের সিদ্ধান্ত এখন কতটা বাস্তববাদী ও কর্মচারীবান্ধব হয়—তার ওপরই নির্ভর করবে আগামী দিনের পরিস্থিতি।

コメントがありません


News Card Generator