বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন যতই স্বাধীন হোক, তবুও সরকারের সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবেই একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। শনিবার (২১ জুন) সকালে রাজধানীর নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নির্বাচনী আইন ও বিধি নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সিইসি তার বক্তব্যে বলেন, ভোটগ্রহণের মাঠে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা অত্যাবশ্যক। “সরকারের সহযোগিতা নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিতে হবে সরকারের সহযোগিতা নিয়ে,” বলেন তিনি। এছাড়া তিনি জানান, সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে, যদিও তা প্রতিদিন হয় না।
নির্বাচনের সময়সূচি সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে সিইসি বলেন, “শিডিউল যথাসময়ে হবে, শিডিউল হলে আপনারা জানতে পারবেন।” জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার জন্য সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলাদা বৈঠকের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঘটা করে দেখা করার বিষয় না। ফর্মাল ও ইনফর্মাল উপায়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের নানাভাবে যোগাযোগ হয়। নির্বাচনের সময় আসলে আপনারা সবাই জানতে পারবেন।”
ভোটের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমরা রোডম্যাপ বলবো না। এটা নানাজনে নানাভাবে লেখে। কেউ সূচি বলে কেউ রোডম্যাপ বলে। তবে এটা রোডম্যাপ না বলে একটা কর্মপরিকল্পনা বলতে পারেন। আমাদের সেই কর্মপরিকল্পনা আছে। এই কর্মপরিকল্পনা আমরা শুরু করেছি অনেক আগে থেকে।”
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন যেসব পদক্ষেপ নেয় তার সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারী সহযোগিতা অপরিহার্য। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সময়ে অবাধ যোগাযোগ ও প্রশাসনিক সহযোগিতা নির্বাচনকে সুষ্ঠু করে তোলার অন্যতম মূল চাবিকাঠি।
সিইসির এই বক্তব্য আসছে এমন এক সময় যখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে। তবে এর সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সহযোগিতা অপরিহার্য, যা সিইসি স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেছেন।
নির্বাচনকে সফল ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সিইসি জানিয়েছেন, তারা রোডম্যাপ না বললেও একটি সুসংগঠিত কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যা নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপকে নির্দিষ্ট সময়মতো ও সঠিকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে।
নির্বাচনী আইন ও বিধি মেনে নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে আইন ও বিধি নিয়ে আলোচনা করে নির্বাচনকে আরো সুষ্ঠু ও সমতল করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এম এম নাসির উদ্দিনের স্পষ্ট বার্তা দেশবাসীকে নির্বাচনের সময় শান্তি ও সচেতন থাকার আহ্বান জানায়। তিনি ভোটারদের ভোটাধিকার সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে উৎসাহিত করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনের সকল পদক্ষেপ যাতে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয় তা নিশ্চিত করতে তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যকার সমন্বয় ও সহযোগিতা আগামী নির্বাচনকে সফল করার মূল ভিত্তি হিসেবে দাঁড়াবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মজবুত ভিত্তি গড়ে তোলে, যা উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।